নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাহাড়তলী থানাধীন নয়াবাজার এলাকায় সন্ধ্যায় হুমকির ঘোষণা দিয়ে ভোররাত্রে ছুরিকাঘাতে আজাদ নামে এক যুবককে হত্যার দায়ে মূল আসামী রাজীবসহ ৪ জনকে আটক করে র্যাব ৭।
সোমবার (২৯ মে) বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের কে আটক করা হয়।
র্যাব ৭ এর সিনিয়র সহকারী মিডিয়া পরিচালক মোঃ নুরুল আবছার বলেন, গত ২৮ মে দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে অজ্ঞাতনামা একব্যক্তি চট্টগ্রাম মহানগরীর নয়াবাজার এলাকার একটি কারখানার গেইটের সামনে প্রশ্রাব করলে কারখানার নৈশ প্রহড়ী ভিকটিম এর বড় ভাই মফিজ (৪০) তাকে বাধা প্রদান করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উক্ত ব্যক্তি নৈশ প্রহরী মফিজকে বলে, ‘এটা সরকারী জায়গা তুই বাধা দেওয়ার কে’ এই বলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আসামী আবু তাহের রাজীব, ওসমান, আবুল হাসান, এবং কতিপয় অজ্ঞাতনামা আসামীরা উক্ত জায়গায় এসে কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হয়। বড় ভাইয়ের সাথে কথা কাটাকাটির শব্দ শুনে ভিকটিক আজাদুর রহমান ঘটনাস্থলে গেলে তার সাথেও কথা কাটাকাটি এবং একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরবর্তীতে আসামীরা ভিকটিমকে দেখে নিবে বলে হুমকি প্রদান করে স্থান ত্যাগ করে।
পরবর্তীতে গত ২৮ মে ভোর আনুমানিক ৪টা ৫০ দিকে ভিকটিম আজাদুর রহমান দোকান হতে নাস্তা আনার জন্য বাসা হতে বের হয়। পথিমধ্যে পাহাড়তলী থানাধীন নয়াবাজার পৌছালে পূর্ব হতে উৎপেতে থাকা আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমকে একা পেয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলাপাথাড়ীভাবে পেটে, পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। ছুড়িকাঘাতের ফলে ভিকটিমের পেটের ভুরি বের হয়ে যায়। ভিকটিমের চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হতে চট্টগ্রাম জেলার পাহাড়তলী থানায় ০৪ জন নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩/৪ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং ২২/৯৭ তারিখ ২৮ মে ২০২৩, ধারা ৩০২/৩৪। মামলা দায়েরের পর হতে আসামীরা আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
উল্লেখ্য, হাসপাতালে নেয়ার পথে মুমূর্ষ অবস্থায় মৃত্যু পথযাত্রী ভিকটিম তার ভাতিজা তারেকুর রহমান এর নিকট তার উপর আক্রমণকারীদের নাম প্রকাশ করেন। ভিকটিম মৃত্যুর পূর্বে আরও বলে যান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসামীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলাপাথাড়ীভাবে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেছে।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত মামলার পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, বর্ণিত মামলার অন্যতম প্রধান কয়েকজন আসামী রাঙ্গামাটি জেলার কোতয়ালী থানাধীন একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল অদ্য ২৯ মে ২০২৩ইং তারিখে বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে মামলা দায়েরের ১৫ ঘন্টার মধ্যে আসামী ১। আবু তাহের রাজীব (২৩), পিতা-মোঃ আবুল হাসেম, থানা-হালিশহর, চট্টগ্রাম, ২। দেলোয়ার হোসেন জয় (২৭), পিতা-মোঃ আনোয়ার হোসেন, সাং-সংসেরাবাদ, থানা-সদর, জেলা-লক্ষীপুর এবং ৩। মোঃ রায়হান সজীব (২২), পিতা- মোঃ ইব্রাহিম, সাং-এরশাদ চেয়ারম্যান বাড়ি, থানা-হালিশহর, চট্টগ্রামকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামীদের দেয়া তথ্যমতে নগরীর কদমতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে আসামী আবুল হাসনাত রানা (৩০), পিতা-আবুল হাসেম, সাং-নয়াবাজার, থানা-হালিশহর, চট্টগ্রামকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা বর্ণিত হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল মর্মে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।