নিজস্ব প্রতিবেদক:
নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন জুবিলী রোডস্থ রয়েল টাওয়ারের সামনে থেকে মারামারির নাটক সাজিয়ে মোবাইল ব্যবসায়ীর ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ডাকাতির মামলায় ৭ লাখ টাকাসহ ৪ জন ডাকাতকে আটক করে পুলিশ।
সোমবার (১০ জুলাই) দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে তাদের কে আটক করা হয়।
সিএমপির পুলিশ কমিশনার কৃঞ্চ পদ রায় বলেন, গত রবিবার ৯ জুলাই দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে বাদি নুর এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানে মোবাইল বিক্রয়ের ব্যবসা করেন। তার প্রতিষ্ঠানের এসআর মোরশেদ আলম ও সহকারী ম্যানেজার ত্রিদিব বড়ুয়া একটি লাল রংয়ের পুরাতন ব্যাগে তার প্রতিষ্ঠানের মোবাইল বিক্রয়ের নগদ ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা সিটি ব্যাংক লিমিটেড, জুবিলী রোড শাখায় জমা দেওয়ার জন্য এসআর মোরশেদ আলম ও সহকারী ম্যানেজার ত্রিদিব বড়ুয়াকে প্রেরণ করেন।
ঐ দিন দুপুর অনুমান ১২টা ৩০ মিনিটের সময় তার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হুমায়ুনের মাধ্যমে সংবাদ পান যে তার প্রতিষ্ঠানের সহকারী ম্যানেজার ও এসআরকে মারধর করে তাদের সাথে থাকা ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে।
এরপর বাদি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে তার প্রতিষ্ঠানের এসআর মোরশেদ আলমকে রক্তাক্ত অবস্থায় এবং সহকারী ম্যানেজার ত্রিদিব বড়ুয়াকে দেখতে পান। তারা জানায় যে, তারা উভয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাংকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে একই দিন দুপুর অনুমান ১২টা ২৫ মিনিটের সময় কোতোয়ালী থানাধীন জুবিলী রোডস্থ রয়েল টাওয়ারের সামনে রাস্তার উপর পৌঁছামাত্রই অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন তাদের প্রতিষ্ঠানের এসআর মোরশেদ আলমকে পিছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। সহকারী ম্যানেজার ত্রিদিব বড়ুয়া ঘটনা দেখে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এই ধরনের আচরণ করার কারণ জিজ্ঞাসা করামাত্রই অজ্ঞাতনামা ০৩ জন ব্যক্তি যাদের বয়স অনুমান ২২-২৫ বছর তাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা জখম করে এবং তাকে রাস্তায় ফেলে দেয়।
অজ্ঞাতনামা ০১ জন যাহার বয়স অনুমান ২৪ বছর সহকারী ম্যানেজার ত্রিদিব বড়ুয়ার সামনে এসে তার হাতে থাকা ছোরার ভয়ভীতি দেখায়। অপরদিকে অজ্ঞাতনামা ০৫ জন যাহাদের বয়স অনুমান ২০-২৫ বছর বাদির প্রতিষ্ঠানের এসআর মোরশেদ আলমকে এলোপাতাড়ী কিল, ঘুষি ও লাথি মারে এবং তাদের হাতে থাকা ধারালো টিপ ছোরা দিয়ে এলোপাতাড়ি ঘাই মেরে তার ঠোঁটে রক্তাক্ত কাটা জখম করে কাঁধে থাকা ০১টি লাল রংয়ের পুরাতন ব্যাগ ভর্তি ৯,৮০,০০০/- (নয় লক্ষ আশি হাজার) টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন বিবাদির মধ্যে দুইজনের মুখে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় ছিল এবং তারা সকলেই একে অপরের সাথে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন বাদির প্রতিষ্ঠানের এসআর মোরশেদ আলমের নিকট থেকে ০১টি লাল রংয়ের পুরাতন ব্যাগ ভর্তি ৯,৮০,০০০/- (নয় লক্ষ আশি হাজার) টাকা নেওয়ামাত্রই দৌড় দিয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজার কাপড়ের গলির দিকে চলে যায়।
বর্ণিত ঘটনা সংক্রান্তে নুর এন্টারপ্রাইজের মালিক জনাব নূর মোঃ ইয়াছিন কবির বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন বিবাদির বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে সিএমপি কোতোয়ালী থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয় হয়।
তারা বিভিন্নভাবে ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করার লক্ষ্যে ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহপূর্বক পর্যালোচনা করে বিবাদি সাহেদ হোসেন মনা কে শনাক্ত করে। পরবর্তীতে গোপন সংবাদের প্রেক্ষিতে গুপ্তচরের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার অবস্থান নির্ণয়পূর্বক ১০/০৭/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ১৪.৫৫ ঘটিকার সময় চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন রউফাবাদ এলাকা থেকে বিবাদি সাহেদ হোসেন মনাকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার কথা স্বীকার করে এবং তার সহযোগী অপর বিবাদিদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে। অতঃপর তার দেখানো ও নিজ হাতে বের করে দেয়া মতে লুন্ঠিত টাকার মধ্যে ভাগে পাওয়া নগদ ৪০০০০( চল্লিশ হাজার) টাকা বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন রউফাবাদ এলাকাস্থ নিজ বাসার শয়ন কক্ষের ভিতর থাকা স্টীলের ছোট আলমারীর ভিতর থেকে উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিবাদি মোঃ একরামুল আলমকে ১৬.৩০ ঘটিকার সময় সদরঘাট থানাধীন মাদারবাড়ী রাবেয়া ওয়ার্কশপের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে গ্রেফতারকৃত মনাসহ ৮/১০ জন বিবাদি ডাকাতি করে লুন্ঠিত টাকা তার কাছে দিয়েছে। তার মধ্যে কিছু টাকা মনাকে এবং আর কিছু টাকা ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদেরকে দিয়ে অবশিষ্ট টাকা নিজের কাছে রেখে দেয়। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং তার দেখানো মতে ১০/০৭/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ১৬.৫০ ঘটিকার সময় হোটেল প্যারামাউন্টের কক্ষ থেকে লুষ্ঠিত টাকার মধ্যে নগদ ৬,৭০,০০০/- ( ছয় লক্ষ সত্তর হাজার) টাকা উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য মতে ১১/০৭/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ভোর ০৬.৩০ ঘটিকা সময় কর্ণফুলী থানাধীন চরলক্ষ্যা সৈন্যেরটেক এলাকা থেকে বিবাদি মোঃ ইয়াছিন এরফান প্র সাব্বির ও মোঃ ইকবাল হোসেন প্রঃ রবিউল প্র: ইডুকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার কথা স্বীকার করে। ধৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা সকলেই ধৃত মোঃ একরামুল আলম এর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় ডাকাতির ঘটনা সংঘটনের পরিকল্পনা করে। মোঃ একরামূল আলম এর পরিকল্পনায় অপরাপর বিবাদিরা বাদির প্রতিষ্ঠানের টাকাকে আনা নেওয়া করাকে বেশ কয়েকদিন যাবৎ অনুসরণ করে। একপর্যায়ে তারা মারামারির নাটক সাজিয়ে ডাকাতির ঘটনা সংঘটন করে বলে স্বীকার করে।
উল্লেখ্য যে, গ্রেফতারকৃত মোঃ একরামুল আলমের বিরুদ্ধে সিএমপির কোতোয়ালী থানায় ০২টি চাঁদাবাজির মামলা, সাহেদ হোসেন মনার বিরুদ্ধে সিএমপির কোতোয়ালী থানায় ০২টি চাঁদাবাজির মামলা ও ০৩টি জখম সংক্রান্ত মামলা এবং মোঃ ইয়াছিন প্রঃ মোঃ এরফান প্রঃ সাব্বির এর বিরুদ্ধে সিএমপির কোতোয়ালী থানায় দ্রুত বিচার আইনে ০১টি মামলা রুজু আছে।