হাটহাজারী নিউজ ডেস্ক:
রাজধানী বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির সাততলার ফ্ল্যাটে গৃহকর্মী তানিয়া বেগমকে মুখে স্কচটেপ ও হাতে গ্লু লাগিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় এখনও কোনও মামলা হয়নি।
গত মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটলেও আজ শুক্রবার পর্যন্ত কোনও মামলা করতে ‘কেউ আসেননি’ বলে জানিয়েছে বনানী থানার ওসি নুরে আযম মিয়া।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও কোনও মামলা হয়নি বা কেউ অভিযোগ করতে আসেননি। মামলা হলে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দুপুরে ৯৯৯-এ কল করে এক ব্যক্তি জানান, বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির সাততলার ফ্ল্যাটে একজনকে নির্যাতন করা হচ্ছে। বাইরে থেকে চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে।
বেলা সোয়া ২টার দিকে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, একজনের হাতে সুপারগ্লু ও মুখ স্কচটেপ দিয়ে বাঁধা রয়েছে। মাথার চুল ও ভ্রু ছেঁটে দেওয়া হয়েছে। শরীরজুড়ে নির্যাতনের অসংখ্য ক্ষত। মারধরে পুরো মুখমণ্ডল ফুলে গেছে। সেই ভুক্তভোগীর নাম তানিয়া বেগম। ওই বিল্ডিংয়ের একটি ফ্ল্যাটে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো সে। তাকে উদ্ধার করে বনানী থানা পুলিশ।
তানিয়াকে উদ্ধারের পর গৃহকর্ত্রী সামিনা আলমকে আটক করে নেওয়া হয় বনানী থানায়। তবে ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ কিংবা তাৎক্ষণিক এ ঘটনার কোনও আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি থানা পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগী গৃহকর্মীর পক্ষ থেকে কোনও মামলা করতে রাজি না হওয়ায় গৃহকর্ত্রী সামিনা আলমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কেন মামলা করতে রাজি হয়নি ভুক্তভোগীর স্বজনরা—জানতে চাইলে তানিয়া বেগমের ভাই শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমার বোনকে যারা নির্যাতন করেছে তারা প্রভাবশালী, মামলা করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন। এছাড়া মামলার খরচ জোগানোর সামর্থ্য নেই আমাদের। এ কারণে মামলা করা হয়নি।’ তবে কেউ এগিয়ে এলে, রাষ্ট্র বা কোনও সংস্থার সহযোগিতা পেলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিতে চান।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরে আযম মিয়া বলেন, ভুক্তভোগী তানিয়ার স্বজনদের আমরা অনুরোধ করেছি মামলা করার জন্য। তবে তারা কোনও মামলা করতে রাজি হননি। তারা মামলা না করলে আমরা কীভাবে ব্যবস্থা নেবো। আইনি ব্যবস্থা নিতে গেলে ভুক্তভোগী পরিবারের সহায়তা লাগবে। তারা আজ পর্যন্ত মামলা করতে আসেনি। মামলা করতে এলে যেকোনও সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।
আইনজীবীরা বলছেন, এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। ভুক্তভোগী পরিবার ভয়ে কিংবা অন্য কোনও কারণে মামলা করতে আগ্রহী না হলে রাষ্ট্রের পক্ষে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করতে পারবে। এ ঘটনার ক্ষেত্রেও পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করতে পারতো। কিন্তু সেটি না করায় গৃহকর্ত্রী নির্যাতন করেও পার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তানিয়া বেগমের ভাই শফিকুর রহমান জানান, দুই বছর আগেও গৃহকর্ত্রী সামিনার বাসায় কাজ করেছিলেন তানিয়া। পরে কাজ ছেড়ে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দায় চলে যান। তবে দুই মাস আগে বাড়ি থেকে রাগ করে তার বোন ঢাকায় এসে সামিনার বাসায় আবারও কাজে যোগ দেন। তানিয়া কোথায় ছিলেন, পরিবারের কেউ জানতো না। পুলিশ তানিয়াকে উদ্ধার করার পর তারা জানতে পারেন।
গৃহকর্ত্রীর সামিনার একটি শিশুসন্তান আছে। ওই শিশু কান্না করলেই তানিয়ার ওপর নির্মম নির্যাতন করা হতো বলেও অভিযোগ করেন শফিকুর রহমান।
তিনি জানান, তানিয়া এখন পরিবারের হেফাজতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসা শেষে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবেন।(বাংলা ট্রিবিউন)