লিখেছেন, তসলিমা নাসরিন:
আন্দ্রেই টারকোভস্কি’র ইভানের শৈশব কি পুতিনবাবু দেখেছেন? নিশ্চয়ই দেখেছেন। এত বড় একটি যুদ্ধ-বিরোধী চলচ্চিত্র দেখার পরও তিনি যুদ্ধ করছেন! আমরা যে বলি কিছু ছবি, কিছু বই জীবন পাল্টে দেয়, দেখার চোখ বদলে দেয়, তা বোধহয় সবার ক্ষেত্রে ঠিক নয়। বিশেষ করে পুতিনবাবুদের মতো লোকের ক্ষেত্রে নয়।
না, পুতিনবাবুকে নিয়ে নয়,কথা বলবো টারকোভস্কিকে নিয়ে। জীবনে সাতটি মাত্র ফিচার ফিল্ম বানিয়েছেন। সেই ফিল্মগুলো এক একটা মাস্টারপিস। এগুলোকে চলচ্চিত্র বলে মনে হয় না, মনে হয় কবিতা, মনে হয় বিমূর্ত ছবি। আসলে একশো ছবি আঁকার, একশো চলচ্চিত্র নির্মাণের, বা একশো বই লেখার দরকার হয় না। ভালো ছবি ছ’সাতটি আঁকলেই চলে, ভালো চলচ্চিত্র ছ’সাতটি নির্মাণ করলেই চলে, ভালো বই ছ’সাতটি লিখলেই চলে। টলস্টয়ও তো কয়েকটি মাত্র বই লিখেছিলেন।
আমাদের এ অঞ্চলেই দেখি সিনেমার পরিচালক মানেই বছর বছর সিনেমা বানাতে হবে, বইয়ের লেখক মানেই বছর বছর বই লিখতে হবে। টারকোভস্কির একটি চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যের সমান হতে পারে না তাদের শত শত চলচ্চিত্র, তাদের শত শত কবিতা, তাদের শত শত ছবি।
আহ যদি টারকোভস্কির মতো কবি হতে পারতাম! টারকোভস্কি কি কবি? নিশ্চয়ই কবি! তাঁর এক একটি দৃশ্যই তো এক একটি আশ্চর্য সুন্দর কবিতা।
(তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত)