নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভিকটিমকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের পর হত্যা; মূল হত্যাকারীসহ ৩ পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৬।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের কে আটক করা হয়।
র্যাব ৬ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, ভারতে বসবাসরত যশোর অভয়নগরের নবাব ও পিরোজপুর ভান্ডারিয়ার বৃষ্টি পরস্পর স্বামী স্ত্রী এবং তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভারতে মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তাদের চক্রের সদস্যদের সাহায্যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভাতরে পাচার এবং বিক্রি করে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করে। এই চক্রের সক্রিয় সদস্য বৃষ্টির মা কুলসুম এবং ভাই আল আমিন যারা খুলনার সদর থানা এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে মানবপাচারে তার মেয়ে এবং মেয়ে জামাইকে সহযোগীতা করে আসছে।
ভিকটিম টুম্পা তার বাবা-মায়ের সাথে ঢাকার ডেমরা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। আসামীরা আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে, টিকটক সেলিব্রাটি বানিয়ে দেওয়া ও বিদেশে চাকরি দেওয়ার নাম করে ভিকটিমকে পাচারকারী বৃষ্টি এবং নবাবের পরিকল্পনায় লেংরা রমজান এবং জুয়েল বিশ্বাসের সহযোগীতায় ঢাকা থেকে খুলনায় নিয়ে আসা হয়। এরপর বৃষ্টির মা (পাচারকারী সদস্য) কুলসুমের বাসায় ভিকটিমকে ৩ দিন রাখা হয়। পরবর্তীতে বৃষ্টি এবং নবাবের আদেশে কুলসুম এবং আল আমিন ভিকটিমকে মানবপাচার চক্রের সাহায্যে যশোর/বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে। ভারতে একটি বাসায় আটকে রেখে ভিকটিমকে ভারতের এনআইডি কার্ড ও আধার কার্ড তৈরি করে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করাতো। এরপর বৃষ্টি এবং নবাবের নির্দেশে আলী হোসেনের জিম্মায় অনৈতিক কাজ করার জন্য ভিকটিমকে ২ মাস আটকে রাখা হয়েছিল এবং জোরপূর্বক ভিকটিমের সাথে আলী হোসেনের টিকটক ভিডিও বানানো হতো, পাশাপাশি ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো।
পরবর্তীতে ভিকটিম পাচারকারীদের সকল গোপন তথ্য জেনে যায় এবং তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দেশে আসার চেষ্টা করে। বিষয়টি নবাব ও বৃষ্টিকে, আলী হোসেন জানায়। তখন বৃষ্টি এবং নবাব, আলী হোসেনকে হত্যা করার নির্দেশ দেয় যেন ভিকটিম পাচারকারীদের গোপন তথ্য ফাঁস করতে না পারে। গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের গুজরাট পুলিশ ফোন করে ভিকটিমের বাবাকে জানায় যে, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে অন্য একটি ফোনের মাধ্যমে ভিকটিমের বাবাকে জানানো হয় আসামী আলী হোসেন তার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে ভিকটিমের বাবা র্যাব বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর থেকেই র্যাব আসামীদের গ্রেফতাররের লক্ষ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে এবং অভিযান অব্যাহত রাখে। র্যাব তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আসামীদের অবস্থান নিশ্চিত করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৪ ফেব্রুয়ারি র্যাব-৬, স্পেশাল কোম্পানি ও যশোর ক্যাম্পের একটি যৌথ আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যশোর ও খুলনা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকারী ১। আলী হোসেন(২০), থানা-কালিয়া, জেলা-নড়াইল এবং পাচারকারীচক্রের সদস্য ২। মোঃ আল আমিন(১৯), ৩। কুলসুম বেগম(৪৫), থানা-খুলনা সদর, জেলা-কেএমপি খুলনাদের গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা উক্ত অপরাধের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ডিএমপি ঢাকার ডেমরা থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।