নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঈদযাত্রা স্বস্তিকর করতে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা এবং পক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ অনুরোধ জানান।
এ সময় তিনি বলেন প্রতি বছর ঈদ এলেই দেশের বিভিন্ন শহর থেকে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে যায় ঘরমুখো লাখো লাখো মানুষ। ঈদ মানে আনন্দ হলেও এই যাত্রাকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিবছরই নিরানন্দ হয়ে উঠে জনগনের ঈদযাত্রা।
বিগত দুই বছর করোনা মহামারীর জন্য ঈদ করতে বাড়ি যেতে না পারার কারণে এবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ শহর ছেড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করছে। সেই সাথে লম্বা ছুটি হওয়ার ফলে বাড়ি যাওয়া মানুষের তালিকাটাও বেশ দীর্ঘ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে প্রতিবছরই জনগনের আনন্দের ঈদযাত্রাকে নিরানন্দ করার অপতৎপরতায় মেতে উঠে ভাড়া নৈরাজ্যকারী সিন্ডিকেট গোষ্ঠী।
ইতোমধ্যে সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশপথের যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যে সংখ্যা আগামী কয়দিনে আরো বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশংকা। সড়কপথের প্রতিটি রুটে চলাচলকারী বাস, মিনিবাস, সিএনজি, টেম্পু, লেগুনাসহ অন্যান্য যানবাহন প্রতি বছর ঈদে জনগনের পকেট কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় যেনো তাদের ঈদ কালচার হয়ে গিয়েছে। ফলত বাড়তি ভাড়ার সাথে যোগ হচ্ছে ভোগান্তি।
এছাড়া ঈদ বকশিশের নামে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অত্যাচার জনগনের নাভিশ্বাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নৌ পথে যাত্রী হয়রানি মারাত্নক আকার ধারন করার আশংকা রয়েছে।
তাছাড়া দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ভয়তো আছেই। ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের কারণে প্রায়শই নৌপথে লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটে। ঈদকে কেন্দ্র করে ফিটনেসবিহীন, চলাচল অযোগ্য নৌযানসমূহ রং করে যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে করে ঝুঁকি নিয়ে পরিবার পরিজনদের সাথে ঈদযাত্রায় শামিল হবেন দেশের অধিকাংশ মানুষ। লঞ্চ দুর্ঘটনা কিংবা আগুন লাগার শংকার সাথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় যোগ হবে নৌ পথে চলাচলকারী জনসাধারনের।
এছাড়াও রেলওয়ের অগ্রিম টিকেট বিক্রি নিয়েও ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে ঘন্টার পর ঘন্টা ষ্টেশনে দাড়িয়ে থেকেও বিফল মনোরথে ফিরে গিয়েছে। বাধ্য হয়েই টিকেট কালোবাজারি থেকে অতিরিক্ত দামে টিকেট নিয়ে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি সাড়ছেন রেলপথে ভ্রমণকারী যাত্রীসাধারণ।
আইনশৃংখলা বাহিনীর নজরদারির মাঝেও টিকেট কালোবাজারিরা জনগনের পকেট থেকে অতিরিক্ত অর্থ কেটে নিচ্ছে। আকাশপথেও ভাড়া নৈরাজ্য চরমে পৌঁছেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বাইরে এবং দেশের ভিতরে চলাচলকারী বিমানের প্রতিটি রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
যে সকল যাত্রী ভ্রমণের জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন তাদেরকে প্রতিটি সিটের বিপরীতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। এ যেনো গলাকাটা ভাড়া আদায়ের মহোৎসব চলছে। এভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়তি ভাড়া আদায় এবং ভোগান্তি সৃষ্টি করে বর্তমান সরকারের অনেক অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে স্বার্থান্বেষী সিন্ডিকেট চক্রটি। ঈদের মতো একটি জাতীয় উৎসবকে এভাবে নিরানন্দ করার অধিকার কারো নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঈদযাত্রার এ ভোগান্তি দূরীকরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা এবং পক্ষ যদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাহলে মানুষের ঈদযাত্রা এবং ফিরে আসার ক্ষেত্রে দুর্ভোগ কমবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।
প্রতিবছর ঈদের আগে দেশের মহাসড়ক এবং অন্যান্য সড়কে ভাঙ্গা কিংবা মেরামতের জন্য যানজট ও অন্যান্য দুর্ভোগের খবর পাওয়া গেলেও এ বছর ঈদযাত্রার আগেই সরকার দেশের প্রায় সকল সড়কসমূহ প্রশস্তকরণ ও মেরামতের মাধ্যমে যান চলাচলের জন্য সম্পূর্ণরূপে উপযোগী করে গড়ে তোলায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন খোরশেদ আলম সুজন।