খোরশেদ আলম সুজন:
রেলওয়ের উপর মোনায়েম খানের প্রেতাত্মা ভর করেছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
মঙ্গলবার (১ মার্চ ) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এসময় সুজন বলেন, চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দাদের জায়গা জমি একসময় রেলওয়ের সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নের জন্য নামমাত্র মূল্যে হুকুম দখল করা হয়েছিলো। কালের বিবর্তনে সেসব জায়গা জমিতে রেলওয়ের বহু স্থাপনা গড়ে উঠেছে। রেলওয়ে দেশের জাতীয় সম্পদ। আর নিজেদের জায়গা জমি হুকুম দখলের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা হলেও তাদের জায়গা জমিতে রেলওয়ের নুতন নতুন স্থাপনা গড়ে উঠছে, রেলওয়ে দিন দিন উন্নত হচ্ছে এ ভাবনায় জায়গার মালিকরা কিছুটা হলেও মানসিক শান্তি খুঁজে পেতো।
পরবর্তীতে দেখা যায় যে, এরকম হুকুম দখলকৃত বহু জায়গা অনাদর অবহেলায় পড়ে রয়েছে সারা চট্টগ্রাম জুড়ে। দুঃখজনকভাবে ধীরে ধীরে এসব জায়গা জমি বিভিন্ন ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী তাদের হীন স্বার্থে কাজে লাগাতে শুরু করে। এসব জায়গায় কখনো বৈধ আবার কখনো অবৈধ স্থাপনা তৈরী করে লাভবান হতে থাকে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল এবং রেলওয়ের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ।
কতিপয় সুবিধাভোগী ব্যক্তি সেখানে অপ্রয়োজনীয় বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করে আর্থিকভাবে লাভবান হলেও যারা রেলওয়ের সম্প্রসারণের জন্য এসব জায়গা জমি নামমাত্র মূল্যে সরকারকে হস্তান্তর করেছে তারা জায়গা জমি হারিয়ে নিজ দেশে পরবাসের মতো বসবাস করছে। এভাবে বছরের পর বছর এসব ভূমি রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য কাজে না লাগিয়ে বর্তমানে হরিলুটের মতো বিভিন্ন বাণিজ্যিক গ্রুপ কিংবা শিল্প গোষ্ঠীর কাছে নামমাত্র মূল্যে লিজ প্রদান করা হচ্ছে যা ভূমি অধিগ্রহণ আইনের পরিপন্থী।
লিজ প্রদান করতে গিয়ে তারা চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবির মতো অনিন্দ্যসুন্দর জায়গাটিও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নামমাত্র মূল্যে লিজ প্রদান করেছে, যে সিআরবি ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের জনগনের প্রাণের ঠিকানায় পরিণত হয়েছে।
পহেলা বৈশাখ, বলী খেলা, বসন্ত উৎসবসহ বাঙালি সংস্কৃতির একটি বিরাট অংশ ঘিরে রয়েছে এই সিআরবি। আর সেই সিআরবির কন্ঠকে রোধ করতে চায় পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা। সিআরবির অভ্যন্তরে মুখোশ পরে বসে থাকা পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের মুখোশ উন্মোচন করা তাই আজ সময়ের দাবী।
অন্যদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রাম নগরীতে নেই কোন মানসম্মত পার্ক, নেই খেলার মাঠ, নেই বিনোদনের জায়গা, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় নির্মিত হয়নি নতুন কোন সরকারি স্কুল, কলেজ কিংবা পাবলিক হাসপাতাল। নতুন কিছু নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করলে জায়গা অধিগ্রহণের জন্য সে কাজ আর এগোয় না। বিভিন্ন সরকারি অবকাঠামোর জন্য রেলওয়ের এসব জায়গা অধিগ্রহণ করতে চাইলে তারা আইন কানুনের দোহাই দিয়ে থাকে।
ফলত চট্টগ্রামের অনেকগুলো সরকারি অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ ভূমি অধিগ্রহণের জন্য থমকে রয়েছে। বিপরীত দিকে রেলওয়ে তাদের নিজেদের উন্নয়ন, যাত্রী সাধারণকে নিরাপদ এবং স্বস্তিকর রেলযাত্রা উপহারের পরিবর্তে জায়গা লিজ প্রদানের কাজে সম্পূর্ণরূপে মনোনিবেশ করেছে।
এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই চট্টগ্রাম নগরী একটি পাখির খাঁচার নগরীতে পরিণত হবে। যেখানে থাকবে না কোন প্রকার পার্ক, খেলার মাঠ, বিনোদনের জায়গা কিংবা শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার মতো উন্মুক্ত জায়গা।
আমরা চট্টগ্রামবাসী রেলওয়ের এহেন কর্মকান্ডে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আমরা রেলওয়েকে পরিস্কারভাবে বলে দিতে চাই অধিগ্রহণকৃত জায়গা যদি সত্যিকার অর্থেই রেলওয়ের উন্নয়নের কোন কাজে না লাগে তাহলে সে জায়গাগুলো অধিগ্রহণকৃত মূল্যে পূর্বের মালিকদের ফেরত দেওয়া হোক অথবা সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া হোক। যাতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আর কারো মুখাপেক্ষী হতে না হয়।
রেলওয়ের লিজ প্রদানের যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে সে প্রতিযোগিতা এখনই বন্ধ করতে না পারলে চট্টগ্রামে আর কোন জায়গা অবশিষ্ট থাকবে না বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।
তাই চট্টগ্রামের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের মর্যাদাকে ধরে রাখতে অধিগ্রহণকৃত জায়গা লিজ প্রদান বন্ধ এবং রেলওয়ের বাকী জায়গা জমি সমূহ সরকারের অধীনে ফেরত নেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন সুজন।