হাটহাজারীতে আবারও জোটে পুড়তে পারে নৌকার প্রার্থীর কপাল: হাসবে কে সালাম নাকি আনিস-ইবরাহিম!
মো: মহিন উদ্দিন:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রাম ৫ হাটহাজারী সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে ১৪ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। তাদের মধ্যে দলীয় গ্রীন সিগনালে এগিয়ে সালাম ও বাবুল এবং পিছিয়ে নেই ইউনুস গণিও।
তবে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ সালামকে গ্রীন সিগনাল দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এমএ সালামের নাম।
তারা হলেন- চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ সালাম,চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ইউনুস গণি চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটির সদস্য রাশেদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট বাসন্তী প্রভা পালিত, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পূবালী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ মাঈনুদ্দীন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ ইউনুছ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ শামীম, মাহমুদ সালাউদ্দিন চৌধুরী, মো: শাহজাহান চৌধুরী, মোহাম্মদ নাছির হায়দার করিম, ডা: নুর উদ্দিন জাহেদ এবং মাসুদ আলম। তারা স্ব-স্ব আস্থা ভাজন ও অনুসারী দলীয় নেতাকর্মী সাথে নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা প্রদান করেছেন।
এবারের নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। এই অবস্থায় দলীয় প্রতীক নৌকা পেলেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া অনেক সহজ মনে করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তাই দলের মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটির নেতাকর্মীরা এখন সারা দেশে নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন।
এদিকে ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে চট্টগ্রাম-৫ সংসদীয় আসন হাটহাজারীতে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি মরহুম এম আবদুল ওয়াহাব, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সনের তৎকালীন উপদেষ্টা মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম।
দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারিয়ে বিজয়ী হন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি মরহুম এম আবদুল ওয়াহাব।
পরবর্তী ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি একাধারে ১৯৮৬ সালের ৭ই মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন।
তারপর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারিয়ে বিজয়ী হন বিএনপির চেয়ারপার্সনের তৎকালীন উপদেষ্টা মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম।
তিনিও একই আসন থেকে একাধারে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও একই বছরের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন।
তারপর আবারো জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম ১ লাখ ৬ হাজার ৯৭৫ ভোট পেয়ে পরাজিত হন।
এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমকে হারিয়ে বিজয়ী হন।
এদিকে আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির অন্যতম শরিক দল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।
শুধু তাই নয় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট যুক্তফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
একই সাথে এই জোটটি বর্তমান সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
নভেম্বরের ২২ তারিখ বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে বিএনপি জোট ত্যাগ করে নতুন জোট গঠন সাথে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণায় চট্টগ্রামের ভোটের রাজনীতিতে চলছে নানা সমীকরণ।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেজর জেনারেল(অব:) ইব্রাহীম বিএনপি জোটের প্রার্থী হয়ে চট্টগ্রাম -৫ (হাটহাজারী) আসন থেকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদের কাছে হেরে যান।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মেজর জেনারেল(অব:) ইব্রাহীম কি তবে হাটহাজারীতে আওয়ামী লীগের জোটের প্রার্থী হচ্ছেন?
তাহলে কি কপাল পোড়বে জোটের আরেক প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদের?
হাটহাজারী থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হতে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের কপালও কি তবে মেজর জেনারেল(অব:)ইব্রাহীমের কারনে পুড়তে চলেছে? সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এই প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। তিনি যদি আমাকে মনোনয়ন দিলেও কাজ করব এবং না দিলেও কাজ করব।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ইউনুস গণি চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন এবং তিনিই আমাকে জোটগত কারণে প্রত্যাহার করতে বলেছেন তা আমি করেছি। আমি দলীয় সিদ্ধান্তের উপর অটল।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ সালাম বলেন, আমি দলিয় সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না। দল যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরাই তার পক্ষে কাজ করব।