নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বর্ষপূর্তি
শহরের সকল এমপি, পেশাজীবীদের নিয়ে দুই-চার মাস পরপর বসার পরিকল্পনা আছে।
সব শ্রেণি পেশার মানুষের পরামর্শ ছাড়া পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলা সম্ভব নয়, আমি মনে করি, মেয়র কোনো ভুল করলে কেবল সমালোচনা করলে হবে না। সাথে সাথে কীভাবে ভুল শুধরানো যায় তার জন্য সঠিক পরামর্শও দিতে হবে।
[caption id="attachment_1365" align="alignnone" width="300"] বিজ্ঞাপন[/caption]
বৃহস্পতিবার চসিক নির্বাচনের একবছর পূর্ণ হয়েছে। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চসিক নির্বাচন। এতে তিন লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম। আমি ১১ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণ করেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি ১৫ ফেব্রুয়ারি।
চট্টগ্রামে দেশের অর্থনীতির প্রাণ বন্দর আছে। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়ার পর এখানে টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মীরসরাইয়ে শিল্পাঞ্চলসহ অনেকগুলো মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। যা অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। সে জায়গা থেকে অর্থনৈতিকভাবে চট্টগ্রামের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।
[caption id="attachment_1395" align="alignnone" width="218"] বিজ্ঞাপন[/caption]
কিন্তু আমরা যারা দায়িত্বে আছি তারা হয়তো চট্টগ্রামকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে পারছি না। এর কারণ হিসেবে আমার ব্যক্তিগত উপলব্দি হচ্ছে, একজন মেয়র যদি মনে করে, ‘আমি সর্বেসর্বা, আমি সব বুঝি, আমিই পরিকল্পনাবিদ’ তাহলে ওই শহর কোনোদিন এগিয়ে যাবে না। ওই জায়গায় আমার চিন্তাধারা ভিন্ন।
আমি মনে করি, শহরে অনেক মেধাবী মানুষ আছে। একেকজনের মেধা ও বুদ্ধি থেকে একেকটা বিষয় বের হয়ে আসতে পারে। নগরপরিকল্পনায় যারা বিশেষজ্ঞ তাদের যদি আমাদের কাজে সম্পৃক্ত করতে পারি তাহলে পরিকল্পিত কাজ করতে সহজ হবে।
[caption id="attachment_1422" align="alignnone" width="233"] বিজ্ঞাপন[/caption]
চট্টগ্রাম শহরে যারা বসবাস করছে তাদের অর্থাৎ সর্বশ্রেণি পেশার মানুষের সাথে শলাপরামর্শ করে চট্টগ্রাম শহরকে গড়ে তুলি তাহলে চট্টগ্রাম গুরুত্ব হারাচ্ছে সে প্রশ্ন আর আসবে না।
আমি কোনো ভুল করলে সাংবাদিক সমাজ সেটার বিপক্ষে লিখছে। কিন্তু কীভাবে শুধরানো যায় সেটা দেখিয়ে দিচ্ছে না। সমাধানও যদি সাথে সাথে দেখিয়ে দেয় তাহলে দায়িত্বে থাকা যে কেউ সঠিক কাজটা করতে পারবে।
শহরের সকল এমপি, পেশাজীবীদের নিয়ে দুই–চার মাস পরপর বসার পরিকল্পনা আছে। উদ্যোগও নিয়েছিলাম। করোনার জন্য বসা হয়নি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বসব। প্রাকৃতিকভাবেই চট্টগ্রাম সুন্দর শহর। সেটাকে আরো কাজে লাগাতে সবার পরামর্শ নিব। তবে একসঙ্গে না বসলেও ব্যক্তিগতভাবে সবার পরামর্শ নিই।
নাগরিকদের সুযোগ–সুবিধা বাড়াতে পরিকল্পনা রয়েছে, শহরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, হাইরাইজড বিল্ডিং হচ্ছে। কিন্তু এগুলো তো শুধু নাগরিক সুযোগ–সুবিধা নয়, আরো অনেক বিষয় আছে। যেমন শহর সুন্দরভাবে সাজাতে চাইলে এখানে নিঃশ্বাস ফেলার জায়গারও ব্যবস্থা করতে হবে। শহরে খেলাধূলার মাঠের অভাব আছে।
এ ব্যাপারে আমি খুব মনোযোগ দিয়েছি। ৪১ ওয়ার্ডে ছেলেমেয়েদের জন্য খেলার মাঠের ব্যবস্থা করব, যতটুকু জায়গা পাই তার মধ্যেই করব।
এ বিষয়ে আমি রেলওয়ে, চট্টগ্রাম বন্দর এবং গণপূর্তকেও প্রস্তাব দিয়েছি। তাদের বলেছি, মালিকানা আপনাদের থাকুক। আমরা ইনভেস্ট করবো। তবে বাণিজ্যিক স্বার্থে নয়, নাগরিক স্বার্থে। যেমন শাহাজাহান মাঠ, আগ্রাবাদ ডেবা, জোড় ডেবায় বা এ ধরনের আরো স্থানে সৌন্দর্যবর্ধন করে নাগরিকদের বিনোদনের সুযোগ বাড়াতে চাই।
সব সুযোগ–সুবিধা শহরের এক জায়গায় করার পক্ষপাতি নই আমি। ছড়িয়ে দিতে হবে। যেমন পতেঙ্গা এলাকায় একটা সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স করা যায়। একইভাবে এক নম্বর দুই নম্বরসহ যেসব অনুন্নত ওয়ার্ড আছে সেখানেও করতে হবে।
টানেল, বে–টার্মিনাল হলে রাস্তায় গাড়ির চাপ বাড়বে। তাই এখন থেকেই পরিকল্পনা করার জন্য আলাপ–আলোচনা করছি। সিডিএ কে বলেছি এবং বিশেষজ্ঞদেরও বলেছি চিন্তা–ভাবনা করার জন্য। লিংক রোড আরো প্রশস্ত করা উচিত। টানেল থেকে যে রোডগুলো শহরের সাথে যুক্ত হয়েছে সেগুলোও আরো প্রশস্ত করা উচিত। সে ব্যাপারেও আলোচনা করছি।
[caption id="attachment_881" align="alignnone" width="300"] বিজ্ঞাপন[/caption]
শহরের যানজট কমাতে রিকশাকে শৃঙ্খলায় আনার পরিকল্পনা আছে, রিকশায় বারকোড সিস্টেম করে দিচ্ছি। মেইন রোডগুলো রিকশামুক্ত করা হবে। এ ধরনের স্লো যানগুলো যদি প্রধান সড়ক থেকে বন্ধ করতে না পারি তাহলে যানজট কমানো যাবে না।
গত এক বছরে শহরের উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রকল্পে ফুটওভার ব্রিজ, কালভার্ট এবং গোল চত্বর আছে। শহরের বেশিরভাগ রাস্তা অন্তর্ভুক্ত সেখানে। এর বাইরে সাড়ে ১২শ কোটি টাকার বারইপাড়া খালের কাজ শুরু করেছি। যান্ত্রিক শাখার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সংগ্রহ করেছি।
[caption id="attachment_883" align="alignnone" width="300"] বিজ্ঞাপন[/caption]
আধুনিক রোড সুইপিং গাড়ি ও রোড মেনটেনেন্স ট্রাক সংগ্রহ করেছি। মেডিকেল বর্জ্য পোড়াতে বাংলাদেশে প্রথম ইন্সিনারেটর প্ল্যান্ট বসিয়েছি। আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহে ২৭০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছি। ফুটপাতের উন্নয়নের জন্য আলাদা প্রকল্প নিয়েছি। আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবে কিচেন মার্কেট করতে প্রকল্প নিয়েছি।
[caption id="attachment_882" align="alignnone" width="300"] বিজ্ঞাপন[/caption]
২০১৭ সালের যে অ্যাসেসমেন্টে অনেকের পৌরকর বেড়েছে। কিন্তু যারা আপিল করছে তাদের এমনভাবে কমিয়ে দিচ্ছি তাতে সবার মধ্যে সন্তুষ্টি আছে। কেউ আর কোনো প্রশ্ন করছে না। অন্যান্য আয়ের খাত বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।