ভয়ংকর রহস্যের গন্ধ গল্পের দ্বিতীয় পর্ব!
লেখক: রিয়াজ রাজ:
রাত ১০ টা ২৩ মিনিট। রবির প্রচন্ড জ্বর। এমন দৃশ্য দেখার পর রবি নিজেকে মেনে নিতে পারেনি। সবাই পালিয়ে এসেছিলো। যে যার বাসায় ভয়ে লুকিয়ে আছে। ওরা এইটাই জানেনা,এই আত্মাগুলো কারা। কেন তাদের এইভাবে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। রবির মা রবির গায়ে কাথা মুড়ে দিয়ে চলে যায়। রবির চোখের সামনে শুধু তান্ত্রিকের লাশটা ভাসছে। কল্পনায় লাশটা দেখতে পাচ্ছে বার বার। তখনি রবি অনুভব করলো,ওর পা কেও কেটে নিয়ে গেছে।http://”ভয়ংকর রহস্যের গন্ধ! – Hathazarinews.com” https://www.hathazarinews.com/%e0%a6%ad%e0%a7%9f%e0%a6%82%e0%a6%95%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a6%b9%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%97%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7/
তৎক্ষণাৎ রবি হাউমাউ করে চিৎকার দেওয়া শুরু করে। ওর মনে হচ্ছে চিৎকারের শব্দটা রুমের ভিতরেই বন্দি রয়ে যাচ্ছে। বাহিরে যেনো কেও শুনতেই পাচ্ছেনা। রবি আরো জোরে চিৎকার দিতে থাকে। আরো আরো জোরে দিচ্ছে।যত শক্তি আছে,সব শক্তি দিয়েই চিৎকার করতে থাকে। এমন সময় রবির কানে অন্য কারো গলার ধ্বনি ভেসে আসে। রবি নিরব হয়ে যায়। পুরো রুমে অন্ধকার, কিছু দেখার মতো অবস্থান নেই। সেই অদৃশ্য কন্ঠ বলল,
– কেমন লাগছে মিষ্টার রবি সাহেব। ( গলার শব্দটা এতোটাই ভয়াবহ ছিলো।রবির বুকের ধুকপুকানি ধীরে ধীরে বেড়েই যাচ্ছে। সাহস নিয়ে রবি বলল)
– কে আপনি? আর আমাদের এইভাবে তাড়া কেনো করছেন?
– তা নিজেরাই খুজে নে। পাপ করেছিস, আর মনে রাখতে পারিস না?
– আমার জানামতে এরকম কোনো পাপ করিনি,যা আপনি বলছেন। কোনো ছেলেকে আমরা কখনোই হত্যা করিনি। আর মেয়েদের ধর্ষণ করেছি, কিন্তু হত্যা করিনি। কিছুদিন আগে একজনকে ভুল করে মেরে ফেলেছি। কিন্তু আপনি তো মেয়ে নন।
– মরতে হবে। তোদের সবাইকে মরতে হবে। এক এক করে মরতে হবে। আমাকে অভিশাপ্ত করে তুলেছিস তোরা। আমি প্রতি মুহূর্তে কষ্টে জীবনযাপন করে যাচ্ছি। আমি ফিরেও এসেছি। প্রতিশোধ হবে। ভয়ংকর প্রতিশোধ।
– আরেহ, কিসের প্রতিশোধ, কার প্রতিশোধ। দেখুন,আপনি হয়তো গুগুল ম্যাপে ভুল করে ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছেন। প্লিজ একটু শিওর হয়ে আসুন।নয়তো বলুন আমরা কি করেছি।( রবির কথার কোনো জবাব আসেনি। রবি আবার বলল)
– কি হলো। আপনি আছেন? ও ভূত ভাইয়া। আচ্ছা আমার পা কি সত্যি সত্যিই কেটে ফেলেছেন? আমি আমার পা অনুভব করতে কেনো পারছিনা?
আবারো কোনো জবাব এলোনা। কিছুক্ষণ পর রুমের লাইট অন হয়ে যায়। রবি হটাৎ আলো দেখে চমকে উঠে। দরজার সামনে রবির মা বাবা দাঁড়ানো। উনারা জিজ্ঞাস করলো।
– কিরে,এতো রাতে কার সাথে কথা বলছিস?
– কই নাতো? রনি কল দিয়েছিলো।ওর সাথেই কথা বললাম।
-মানে কি রবি? তোর ফোন তো আমাদের রুমে।চার্জ দেওয়ার পর আনতে ভুলে গেছিস। আমরা তোর ফোন দিতে এসেছি। এখন তুই মিথ্যাও বলছিস,আবার একা একা কথা বলছিস। কি হয়েছে আব্বুকে খুলে বলল।
– বাবা কিছু হয়নি। তবে হতে পারে।তোমরা দোয়া করো আমার জন্য।
– কি সব আজব কথাবার্তা বলেই যাচ্ছিস। আচ্ছা,না বলতে চাইলে নেই। দরকার মনে পড়লে বলিস। এই নে তোর ফোন।
ফোন দিয়ে রবির বাবা মা চলে যায়। রবি পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে পা আছে,কিন্তু অবশ হয়ে আছে। তখনি রবির নাম্বারে একটা কল আসে। রবি ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে রনির ফোন।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভয়ার্ত কন্ঠে রনি বলল,
– র র রবি,কই তুই?
– বাসায়। কি হয়েছে।তোর কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেনো।
– বড় ধরনের ঘটনা ঘটে গেছে দোস্ত।
– কি হয়েছে বলবি তো।
– রি রি ( এইটুকু বলেই রনি কান্না শুরু করে দিয়েছে)
– এই রনি কান্না করছিস কেন।খুলে বল কি হয়েছে।
– রিফাত মারা গেছে বন্ধু। ওর লাশ খুব ভয়ংকরভাবে রাখা আছে। আমরা সবাই রিফাতের বাসায়। তুই তাড়াতাড়ি আয়।
– বলিস কি। দাড়া আমি আসছি।
সাথে সাথে ফোন কেটে দেয় রবি। পা অবশ।উঠার কোনোই গতি নেই। রবি পায়ের উপর কোনোভাবে ভর করে বিছানায় উঠে বসে। ধীরে ধীরে পা এইবার আগের মতোই হয়ে যায়। রবি তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে যায় বাসা থেকে। এতো রাত গাড়ি বের করা যাবেনা। অবশেষে রবি নিজের বাইক নিয়ে রওনা দেয় রিফাতের বাসায়। ১০ মিনিটের মাথায় রবি রিফাতের বাসায় পৌঁছায়। বাসার সামনে বাইক থামিয়ে,সোজা উপরে দৌড়ে যায়। রিফাতের রুমে প্রবেশ করতেই রবি দেখে, রিফাতের দুই পা কেও কেটে আলাদা করে দিয়েছে। আলাদা করা পা দুটো স্বাভাবিক নয়। কাটা পায়ের মধ্যে কেও লোহা ঢুকিয়ে ছিদ্রযুক্ত করে দিয়েছে। কাটা পায়ের মধ্যেই শতক্ষানেক ছিদ্র। অন্যদিকে রিফাতের উপরের বডিও স্বাভাবিক নয়। দেওয়ালের সঙ্গে ঝুলানো। রিফাতের চোখ বরাবর দুইটা লোহা ঢুকিয়ে দিয়ে,সেগুলো দেওয়াল ভেদ করে ভিতরে ঢুকানো হয়েছে। অর্থাৎ চোখের ভিতর লোহার উপরেই রিফাতের লাশ ভেসে আছে। রবি এসেই এসব দেখে সেখানেই বমি করে দেয়। রনি,জুয়েল,আর রাকিব এসে রবিকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে। অন্যদিকে রিফাতের মা অজ্ঞান হয়ে আছে। রিফাতের বাবা কান্না করছে বসে বসে।
কোনোভাবে রাতটা পার হয়। সকালে রিফাতের জানাজা হয়,এরপর দাপন দেওয়া হয়েছে! কবর দেওয়ার পর আর কেও রিফাতের বাড়ি যায়নি। রনি সোজা একটা সিগারেটের দোকানে গিয়ে সিগারেট ধরায়। সারারাত কেও ঘুমায়নি। রনির সাথে বাকি তিনজনও সিগারেট ধরায়। সিগারেট টানতে টানতে জুয়েল বলল,
– এইবার তো আমরা সবাই শিওর। কোনো আত্মা ঠিকই এসেছে। সে আমাদের মারতে চায়।
রবি বলল,
– কালকে রাতে আমার রুমে আত্মাটা এসেছিলো। তবে ওটা ছেলের আত্মা। আমি বুঝিনা,আমরা কোনো ছেলেকে তো মারিনি। উনি ভুল করছে নাতো?
রনি বলল,
– এর মাঝে আবার বাচ্চার আত্মা, আবার এক বুড়ো মানুষের আত্মাও আছে। এইটা কেমন রহস্যরে বাবা। যাদের আমরা চিনিওনা। তারা আমাদের পিছু কেনো নিলো।
রবি বলল,
– কালকে রাতে বলেছিলো প্রতিশোধ নিবে। এদের কাজই প্রতিশোধ নেওয়া। আমাদের সবাইকে নাকি মেরে ফেলবে সে।এখন মরার আগে অন্তত এইটা যদি জানতাম কার আত্মা এইগুলো। বা কি করেছি আমরা। তাও মনটাকে শান্তনা দিতে পারতাম।মরতে তো হবেই।
ওদের কথার মাঝে ইন্সপেক্টর মিজান সাহেবের আগমন ঘটলো। মিজান সাহেবকে দেখে ৪জনই সিগারেট ফেলে দেয়। মিজান সাহেব এসে রনির উদ্দেশ্যে বলল,
– কি খবর রনি সাহেব।
– দেখতেই তো পাচ্ছেন।
– এই কেসটাও আমি পেয়েছি। আপনাদের কলেজের কেও কোনো গণ্ডগোল পাকিয়েছে। নইলে কয়দিন আগে তানিয়া নিখোঁজ। আবার একই কলেজের একজন স্টুডেন্ট এখন খুন। ব্যাপার কি,জানেন কিছু?
জুয়েল বলল,
– আমাদের বেষ্টফ্রেন্ড হত্যা হয়েছে। আমরা এইটা নিয়েই চিন্তিত। আর আপনি আমাদের কাছে তথ্য জানতে এসেছেন? কলেজে তো আরো ছাত্র আছে। তাদের জিজ্ঞাস করতে পারেন না?
মিজান সাহেব বলল,
– দেখুন? আপনাদের বন্ধু মরেছে দেখেই আপনাদের জিজ্ঞাস করছি। হতে পারে রিফাতের মৃত্যুর সাথে আপনাদেরও কোনো কানেকশন আছে।
রনি বলল,
– কি বুঝাতে চাচ্ছেন আপনি? রিফাতের খুন আমরা করেছি?
– না না না রনি সাহেব।আমি আপনাদের খুনি বলছিনা। তানিয়া নিখোঁজ, এরপর আপনাদের বন্ধু খুন। আত্মা ভূতের কাহিনীর মতো হয়ে গেলো। যেনো তানিয়ার আত্মা এসে রিফাতকে হত্যা করেছে।
মিজান সাহাবের কথা শুনে ওদের সবার মুখে ভয়ের চাপ সৃষ্টি হয়। মিজান সাহেব ভ্রুভঙ্গি পাল্টে ফেলেছে। ওদের ৪ জনের দিকে আরো সন্দেহভঞ্জন ভাবে নজর দিচ্ছে। রনির গলা শুকিয়ে গেছে।দোকান থেকে রনি এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়।এরপর রনি মিজান সাহেবের উদ্দেশ্যে বলল,
– আপনি আইনের লোক হয়ে এসব আত্মাদের প্রতি বিশ্বাস করেন? হাইস্যকর। যাইহোক, আপনি যা ভাবছেন এইসবের কিছুই নয়।রিফাতের অনেক শত্রু ছিলো।হয়তো কেও এসে তাকে হত্যা করেছে।
– আচ্ছা মেনে নিলাম আপনাদের কথা। কিন্তু গতকাল সকালে আপনারা সাভারে কেনো গিয়েছিলেন?
– মানে? ( এইবার ওরা আরো বেশি চমকে যায়)
– না বুঝার মতো কিছু বলিনি আমি। জুয়েল সাহেবের গাড়ি গতকাল সাভারে উপস্থিত ছিলো।সি,সি,টিভি ফুটেজে আপনাদের ভিতরে দেখা গিয়েছিলো। এখন তো বুঝতে পারছেন আমি আশ্চর্য হবার মতো কিছু বলিনি।
জুয়েল বলল,
– কাল আমাদের ঘুরতে ইচ্ছে হয়েছিলো। তাই সাভারের উদ্দেশ্যে রওনা করি। ওদিকে বেড়াতে গেছি শুধু।
– কোনো তান্ত্রিকের বাড়িতে গিয়েছিলেন কি?( এইবার রনি,রবি,রাকিব আর জুয়েল পুরো থমকে যায়। এই লোক এতকিছু খবর পেয়েছে কিভাবে। রনি আবার বলল,)
– আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন সেটা বলুন।
– না মানে কাল সাভারে একজন তান্ত্রিকের মৃত্যু হয়েছে। তাই এমনিতেই জিজ্ঞাস করলাম।
– না,আমরা কোনো তান্ত্রিকের বাড়িতে যাইনি।
– তান্ত্রিকের বাড়ির সামনে কাদাযুক্ত মাটি আছে। সেখানে জুয়েল সাহেবের কারের চাকার দাগ আছে। আমি কি ভুল কিছু বলেছি?( রবি এইবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধরা খাওয়ার মতো কিছু হয়ে গেলে,উল্টো দৌড় দিবে। এর আগেই রনি বলল)
– আজিব তো? চাকার দাগটা জুয়েলের গাড়ির চাকার দাগ,তার প্রমান কি? একই রকম চাকা তো অনেক আছে। আপনি শুধু শুধু আমাদের কেনো সন্দেহের জালে ফাঁসাচ্ছেন।
– ওও সরি সরি। যাইহোক, এখন বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তী সময়ে দেখি কোনো প্রমান হাতে পাই কিনা। টেক কেয়ার।
কথাটা বলেই মিজান সাহেব গাড়িতে উঠে যায়।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে জায়গা ত্যাগ করে মিজান সাহেব।এদিকে এদের চারজনের কপালে ঘামের রেশ পড়ে গেছে। হাফ ছেড়ে বাচলো ওরা। একটা সুস্থির নিশ্বাস নিয়ে জুয়েল বলল,
– এইটা পুলিশ নাকি গোয়েন্দা। এক এক করে সব খবর নিয়ে রাখলো।
রনি বলল,
– ও হ্যা,গোয়েন্দা। গোয়েন্দা নাম শুনে একজনের কথা মনে পড়ে গেলো।
রবি বলল,
– কার নাম। রিয়াজ.?
– হ্যা ভাই হ্যা। আমাদের জুনিয়র।অনার্স ২য় বর্ষের সেই ছেলেটা। ফেসবুকে নাকি ভালোই নাম ডাক।জানিনা বাস্তবে কতটুকু জানে সে।
জুয়েল বলল,
– ছেলেটি এমনিতেই থাকে সাধারণ ভাবে।দেখে মনে হয়না এতকিছু জানে।
– না জানলে এতো কিছু লেখে কিভাবে।যাইহোক, একবার কথা বলে দেখি। সে অন্তত আমাদের সাহায্য করতে পারলে বেচে যাই।
– তাকে আমাদের ব্যাপারে সব বলে দিবি? যদি সে সব কিছু পাবলিশ করে দেয়?
– আরে না বোকা। শুধু এই আত্মাদের কথা বলবো। ধর্ষণের ব্যাপারে কিছু বলা যাবেনা।
– আচ্ছা।
দোকানের সামনে থেকে সবাই যে যার বাড়িতে চলে যায়। কলেজের জন্য রেডি হয় সবাই। এরপর আবার সবাই কলেকে একত্রিত হয়। কিন্তু রিয়াজকে দেখতে পাচ্ছেনা কোথাও। এরপর ক্লাস,ক্যান্টিন, মাঠ,সামনে,পিছনে সব জায়গায় দেখে। রিয়াজ কোথাও নেই। রনি বলল,” আচ্ছা,ছাদে গিয়ে দেখি। ওখানে না পেলে ওর বাসায় যাবো”। রনির কথায় সবাই এক হলো। চারজন মিলে চলে যায় ছাদে। ছাদের গেট খুলতেই রনি,রবি,জুয়েল আর রাকিব চমকে উঠে। জুয়েল বলে উঠলো,
– ওহ মাই গড।এইটা কিভাবে সম্ভব
চলবে…..?
( ছাদে ওরা কি দেখেছে? রিয়াজকে? নাকি অন্য কিছু? আর তারা ধর্ষণ করে হত্যা করেছে এক মেয়েকে,তাহলে এই যুবক ছেলে কে? সাথে বৃদ্ধা আত্মাটা কার? আর বাচ্চা আত্মাগুলো কে?রিফাতকে কে মেরেছে? যুবক নাকি বৃদ্ধা, নাকি বাচ্চা আত্মা? ওরা কেনো মারছে তাদের? পুরোনো কোনো গল্প আছে? থাকলেও এদের অজানা কেন? রিফাতের এতো ভয়ংকর মৃত্যু বা কেনো হলো? ছাদে এসে ওরা এতো অবাক হলো কেন? রহস্য, ভয়ংকর রহস্য)
ঘটনামূলক মন্তব্য করবেন।আপনারা গল্প পড়ে মজা নেন,আর আমি কমেন্ট পড়ে।