ভয়ংকর রহস্যের গন্ধ: প্রথম পর্ব।
হাটহাজারী নিউজ ডেস্ক:
তানিয়াকে আজ তারা ধর্ষণ করবে।মেয়েটিকে জঙ্গলের দিকে টেনে নিয়ে গেলো ৫ জন ছেলে। ওর দেহের উপর প্রচন্ড লোভ বেড়েছে তাদের। গত ১ সাপ্তাহ থেকেই, তানিয়ার এই সুন্দর দেহ উপভোগ করার জন্য অপেক্ষারত ছিলো এরা ৫ জন। আর আজ সেটা পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে। ওরা তানিয়ার সব কিছু কেড়ে নিয়ে নিজের তৃপ্তি মিঠাবে। তানিয়া চিৎকার দিতে চেয়েও পারেনি। একজন তানিয়ার মুখে তানিয়ার ওড়না বেধে দেয়। ওর চিৎকারের শব্দটা ওড়নার ভিতরেই সীমাবদ্ধ।এদিকে সূর্য ঢুবে গেছে। অন্ধকার নেমে এলো জঙ্গলে,সাথে এই মানুষরুপি হিংস্র ছেলেগুলোও হয়ে যায় ভয়ংকর।
তানিয়া অচেনা কেও নয়। ওরা সবাই একই কলেজের স্টুডেন্ট। তানিয়া মাত্র ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে। আর ওরা ৫ জন অনার্স ফাইনাল দিবে এবার। পড়ালেখায় সবাই ভালো মার্ক করে ঠিকই,কিন্তু ওদের স্বভাব ভালো নয়। মেয়ে,টাকা,নেশা এই তিনটার উপর তাদের অনেক লোভ। তানিয়া জোরজবরদস্তি করতে করতে হয়রান হয়ে গেছে। জঙ্গলে তানিয়াকে নিয়ে গিয়ে একজন পা ধরেছে,একজন মাথা,আর বাকিরা রেডি হচ্ছে ওর সুন্দর দেহটাকে নষ্ট করার জন্য। তানিয়া দেখতেও খারাপ নয়। যেকোনো ছেলেই ওর প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে। ব্যবহার আর চেহারা দুটোই বরাবরের মতো উত্তম। কিন্তু কে জানতো,আজ ওর এই চেহারা মূল্যহীন হয়ে যাবে। আর সাথে নিজের ইজ্জৎটাও হারাবে।
যে ৫ জন ধর্ষণ করবে,তাদের নাম হচ্ছে রনি,রবি,রিফাত,জুয়েল আর রাকিব। ৫ জনই বড় লোকের সন্তান( ধনীব্যক্তির পুত্র)। টাকার অভাব নেই,কিন্তু ভুল পথে টাকা ব্যয় করে বলে বাড়ি থেকে কড়া হিসেবে টাকা দেওয়া হয়। আর এই কড়া হিসেবে ওরা কেউ সন্তুষ্ট না।
তানিয়াকে জোরজবরদস্তি করে ওরা ৫ জনই ধর্ষণ করলো। রাকিব সব শেষে বলল,
– আচ্ছা শুন, মেয়েটি নড়াচড়া করছেনা কেন?
জুয়েল বলল
– মরে টরে গেলো নাকি।
রিফাত বলল,
– এইরে খোদা। এখন আবার ভৌতিক মুভির মতো ঘটবে নাতো? ধর্ষণের পর মৃত্যু হলে মেয়েদের নাকি আত্মা ফিরে আসে। তারপর নাকি প্রতিশোধ নেয়।
রবি বলল,
– এই কি বলছিস এসব। এসব বলিস না।এমনিতেই ভয় লাগে এসব ভূতটুত।
রবির কথা শুনে সবাই হাসাহাসি শুরু করে। ওদের এই গ্রুপে ভিতু থাকলে একজনই আছে। রবিকে নিয়ে মজা করতে দেখে রনি বলল,
– এসব কিছুই হয়না। ওটা মুভি,আর এইটা বাস্তব জীবন। এই অব্দি তো আমরা ১১ জনকে ধর্ষণ করেছি। কই,কেও তো প্রতিশোধ নিতে এলোনা।হা হা হা।
জুয়েল বলল,
– হা হা হা,ঠিক বলছিস রনি।
রবি বলল,
– কিন্তু কেও তো মারা যায়নি এই অব্দি। ১২ নাম্বারে এসে আমরা ধর্ষণের সাথে খুনটাও করেছি।
রিফাত বলল,
– শুন ভাই মন দিয়ে। এই মেয়েটির হয়াত আল্লাহ এইটুকু অব্দিই রেখেছে। তাই হয়তো মরে গেছে।আমাদের দোষ কোথায়।
– যাজ্ঞে,এখন লাশটা কি করবি দেখ।
– জঙ্গলের মাঝে একটা ছোট পুকুর আছে। এই বর্ষানামা সময়ে নিশ্চয় পানি জমাট বেধেছে। চল এই লাশটাকে ওখানে ফেলে দিয়ে আসি। পুকুরের কুমির আর অন্যান্য জীবজন্তু নিজেদের খাবারও পাবে।
– হুম।আমরা আবার জন্তু প্রেমি।হা হা হা
যেই ভাবা সেই কাজ। তানিয়ার লাশটা ওরা কাধে নিয়ে জঙ্গলের আরো গভীরে প্রবেশ করে। খুব সাবধানতার মধ্যে লাশটি পুকুরে ফেলে দেয় ওরা। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে,পুকুরে লাশটি ফেলার সাথে সাথে কে যেনো লাশটি টেনে তলদেশে নিয়ে গেছে। রনি বলল,” নে কুমির বাবাজি।এতক্ষণ আমরা খেয়েছি,এইবার তুই খা”।
ওরা ৫ জনই বের হয়ে যায় জঙ্গল থেকে। কিন্তু আসলেই বের হয়েছে? জঙ্গল থেকে বের হয়ে,অভিশাপ্ত জীবনে পা রাখলো নাতো? কিজানি বাবা। সেটা আপনারা সামনেই দেখতে পাবেন। তবে প্রতিটি কথায় ইসলাম টেনে নেওয়াটা মানুষের বড্ড বোকামি। ওরা তানিয়ার হয়াত টেনে আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু ওরা জানেনা,আল্লাহ চোখ দিয়েছে কাটা দেখে হাটার জন্য। আবার কাটা সবসময় পার হতে পারে তাও নয়। নিজের অজান্তেও কাটা ফুটে যায়। এগিয়ে যাওয়া যাক। দেখি পরে কি হয়েছে।
সেদিন রাতেই হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। তানিয়া বাড়িতে ফেরেনি। রাত ১২ টার বেশি বাজতে যাচ্ছে। তানিয়ার আব্বু কলেজে ফোন দেয়। সেখানে শুনতে পায় তানিয়া বিকেলেই কলেজ ত্যাগ করেছে। ওর সকল বন্ধু আর বান্ধুবীদের কাছে যোগাযোগ করেও লাভ হয়নি। তানিয়া কারো বাসাতে নেই। তানিয়ার বাবা ছুটতে থাকে পুরো শহরে।রাত ২ টা বেজে গেছে।তানিয়ার বাবা আর না পেরে থানায় যায়। গিয়ে দেখে ইন্সপেক্টর মিজান সাহেব বসে বসে কি যেনো একটা ফাইল চেক করছে। তানিয়ার বাবা ক্লান্ত দেহ আর মুখভর্তি ঘাম নিয়ে ইন্সপেক্টরের সামনে দাঁড়ায়। তানিয়ার বাবার উপস্থিতি বুঝতে পারে মিজান সাহেব। বুঝেও তিনি ফাইলের দিকেই মন দিয়ে তাকিয়ে আছে। তানিয়ার বাবা নিজে বলল,
– স্যার,আমাকে মেয়েকে বাচান প্লিজ। সেই কবে কলেজ থেকে বের হয়েছে। এখনো ফেরার নাম নেই। স্যার প্লিজ বাচান আমার মেয়েকে।আমার একমাত্র মেয়ে স্যার। দয়া করুন স্যার প্লিজ।
তানিয়ার বাবার একটা কথার ও উত্তর দেননি মিজান সাহেব। উনি ফাইলের দিকেই তাকিয়ে আছে। তানিয়ার বাবা উনাকে আবার বলল,
– স্যার আপনি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন? স্যার আমার মেয়ে নিখোঁজ। আমার কথার উত্তর তো দিন। আপনারা আইনের লোক। আপনাদের কাজ আমাদের সাহায্য করা। আপনি কি কানে শুনতে পাননা নাকি।
কথাটা শুনেই মিজান সাহেব রেগে যায়। ক্ষিপ্ত হয়ে বসা থেকে উঠেই তানিয়ার বাবার কলার চেপে ধরে। এরপর চোখমুখ লাল করে মিজান সাহেব বলল,
– তুই আমাকে ডিউটি শিখাচ্ছিস? আমি এখানে কি উড়ে এসে বসেছি? শালা এমন দেয়া দিবো আজীবন মনে রাখবি।
– স্যার রাগ করবেন না প্লিজ। আমি সাহায্যের জন্য এসেছি। আমার মেয়ে নিখোঁজ। দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন প্লিজ স্যার। ( কথাটা শুনে মিজান সাহেব উনার কলার ছেড়ে দেয়। এরপর চেয়ারে বসে প্রশ্ন করতে লাগলো)
– মেয়ের বয়স কতো।
– এইবার ১৮ তে পা দিয়েছে স্যার।
– দেখতে কেমন।ছবি এনেছেন?
– জ্বী স্যার। এইজে নিন ছবি।( পাঞ্জাবির পকেট থেকে তানিয়ার একটি ছবি বের করে দিলেন)
– বাহ,সেই সুন্দরী তো? বিয়ে হয়েছে?
– স্যার,মাত্র ১৮ বছর বয়স। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবো কেন।
– ও ভুলে গেছি। দেখতে তো ১৯ বছরের মতো লাগে। একেবারে হট দেখতে।
– স্যার,আমার মেয়েটি নিখোঁজ। দয়া করে তাকে খোজার ব্যবস্থা করুন প্লিজ।
– মেয়ে রিলেশন করতো? মানে কোনো প্রেমিক ছিলো?
– না স্যার। আমার মেয়ে ওরকম নয়। আমাদের অনুমতি ছাড়া সে এসবের ধারেও যাবেনা।স্যার প্লিজ তাকে খুজে বের করুন।
– আরে দাঁড়ান তো? তাকে খুজতে হলে তার সম্মন্ধে তো জানতে হবে। এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেন।
– আচ্ছা বলুন স্যার।
– এইতো লাইনে এসেছেন। তা আজকাল মেয়েরা বাসায় না জানিয়েই রুমডেটে চলে যায়। ছেলেদের সাথে নষ্টামি করে বেড়ায়। এরকম কোনো স্বভাব ছিলো নাকি আপনার মেয়ের।
– স্যার প্লিজ। এসব কি বলছেন। আমি বললাম তো আমার মেয়ের ওমন বাজে অভ্যাস নেই।
– ওর ছেলে বন্ধু কয়জন।
– কলেজে শুধু আকাশ নামের একজনের সাথে ওর বন্ধুত্ব আছে। লেখাপড়ায় সাহায্য করতো। এই ব্যতীত বাকি সব মেয়ে বন্ধু।
– হতে পারে আকাশের সাথে কোনো হোটেলে ভাড়া করে শুয়ে আছে। আজকাল তো যাষ্ট ফ্রেন্ডরাও কম যায়না।
– স্টপ স্যার। কিসব আজেবাজে কথা বলছেন। আমার মেয়েকে আমি চিনি। সে এরকম কিছুই করবেনা কখনো।
– আচ্ছা শান্ত হোন। আপনার ফোন নাম্বার লিখে যান। আমি দেখছি। কিছু জানতে পারলে কল দিবো আপনাকে।
– স্যার,প্লিজ একটু ভালো করে খুঁজুন। আমার একমাত্র মেয়ে। তাকে না পেলে হয়তো আমরা স্বামী স্ত্রী দুজনেই গলায় ফাসি দিবো।( কান্না করে দেয়)
– আরে থামুন।আপনি নিশ্চিন্তে বাড়িতে যান। আমরা দেখছি ব্যাপারটা।
তানিয়ার বাবা অসহায় হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়িতে সবাই জেগে আছে। তানিয়ার চাচাতো ভাই বোন সহ আরো অনেকজন এসেছে। তানিয়ার বাবা বাসায় ঢুকার সাথে সাথেই সবাই জানতে চাইলো পেয়েছে কিনা। তানিয়ার বাবা মাথা নিচু করে চলে যায়। আবারো কান্নার রোল পড়ে তানিয়ার বাড়িতে।
রাত গিয়ে সকাল হলো। ড্রইংরুমে এখনো সবাই জেগে আছে।সারা রাত কারো চোখে ঘুম নেই।অন্যদিকে সকাল বেলা রনি,রবি,জুয়েল,রিফাত আর রাকিব হাসি খুশিতে কলেজে আসে। ওদের এরোদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আজ সারাদিন আড্ডা দিবে তারা। ক্লাস পরে,আগে আনন্দ। কলেজের ক্যান্টিনে সবাই বসে বসে গল্পগুজব করছে। কাল রাতে কে কিভাবে কি করেছিলো।সেগুলো বলে বলে মজা নিচ্ছে। এই আনন্দের সময়টাকে রবির একটু চেপে ধরেছে।সে সবাইকে বলল,” আচ্ছা আমি বাথরুম থেকে আসতেছি। থাক তোরা”। এদের ছেড়ে রবি দৌড়ে এসে বাথরুমে যায়। পেট খালি করে আয়নার সামনে মুখ পরিষ্কার করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। মুখে পানি মারতেই রবি অনুভব করলো,সে যে টয়লেট থেকে বের হয়েছিলো। সেই টয়লেট থেকে কিছু একটা শব্দ আসছে। শব্দটা এরকম,যেনো কোনো পাতিল কিংবা মগ থেকে পানি ছেড়ে দিলে যেমন শব্দ তেমন। রবি ওয়াশরুম থেকে টয়লেটের দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো। এখানে সে ছাড়া কেও আসেনি।তবে ভিতরে কে।আবার ভাবলো হয়তো পানির কলটা সে বন্ধ করতে ভুলে গেছে। রবি টয়লেটের সামনে এসে দরজাটা খুলে ফেলল।
অদ্ভুত, ভিতরে কোনো শব্দই নেই। অথচ একটু আগেও পানি পড়ার শব্দ শুনেছিলো রবি। দরজাটা বন্ধ করে রবি আবার আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। আর আয়নার সামনে আসতেই রবি খেয়াল করে,আয়নার ভিতরে তাকে নয়। অচেনা একটা ছেলেকে দেখা যাচ্ছে। ছেলেটির সমস্ত মুখে আঘাতের চিহ্ন। মনে হচ্ছে কোনো ব্লেড কিংবা ছুরি দিয়ে ছেলেটির মুখে একে দেওয়া হয়েছে। রবি এই ভয়ংকর চেহারা দেখা এক চিৎকার মেরেই দৌড় শুরু করে। বাকি ৪ জন ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে। কোত্থেকে যেনো দৌড়ে এসেই রবি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পড়ে। প্রচন্ড হাপাতে শুরু করে রবি। জুয়েল বলল,
– কিরে। এইভাবে হাপাচ্ছিস কেনো। মনে হচ্ছে ভূত দেখে এসেছিস হাহাহা( অট্টহাসি শুরু হয় ওদের ৪ জনের। রবি বলল)
– ভুল বলিস নি। আমি সত্যিই ভূত দেখেছি। খুব ভয়ংকর সে। তার চেহারা ক্ষতবিক্ষত। সে ভয়ংকর চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিলো। আয়নায় আমাকে দেখা যাচ্ছিলোনা। আমি শুধু তাকেই দেখেছি। দোস্ত,এই আত্মাটা কার।
রাকিব বলল,
– আমার জানামতে ওটা তোর চেহারা। তোর চেহারা এতো খারাপ যে,আয়নায় তুই নিজেকে ভূত ভেবে বসে আছিস। হাহাহা
– দেখ মজা নিবিনা। আমি সত্যিই দেখেছি। একটা ছেলে দাঁড়িয়ে ছিলো। ওর বয়স ২৩-২৪ হবে হয়তো । আমি নিজের চোখে দেখেছি। বিশ্বাস কর ভাই।
রনি বলল,
– বুঝেছি। তুই তো এমনিতেও ভিতু। এর উপর আবার বাথরুমে গিয়ে হয়তো ভুলভাল ভেবেছিস। তাই এমন হয়েছে। নে আরেকটু খেয়ে নে। সব ঠিক হয়ে যাবে।
রবির কথাটাকে কেও মূল্য দেয়নি। যদিও দেয়নি,কিন্তু পরে দিতে হয়েছে। আর এমনি এমনি মূল্য দিতোনা। ঘটনা ঘটেছে জুয়েলের সাথে। জুয়েল আড্ডা শেষ করে বাসায় ফিরে যাচ্ছিলো। হটাৎ জুয়েলের মামা জুয়েলকে ফোন দিয়ে বলে তার বাসায় যাওয়ার জন্য। জুয়েল তার মামার বাড়িতে উপস্থিত হবার পর দেখতে পায়,আজকে তার ভাগনির জন্মদিন। জুয়েল নিজের হাতে ভাগনিকে কেক খাইয়ে দিয়ে বাসার আসার প্লান করে। অনুষ্টানে একটু দেরি হয়ে গেছে। এসেছিলো সেই বিকেলে। এখন রাত ১১:০৮ বাজে। জুয়েল তার মামা-মামীকে বিদায় দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়। জুয়েলের মামার বাসা কলেজের পাশেই। এখন থেকে বাসায় যেতে ১৫ মিনিটের মতো লাগবে।এতো রাতে গাড়িও বা পাবে কোথায়। জুয়েল অবশেষে হেটে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।তবে হেটে গেলে ৩০ মিনিট লাগতে পারে। রাতের শহরটা হটাৎ করেই স্তব্ধ হয়ে যায়। কোথায় যেনো দূর থেকে কয়েকটি কলকারখানার মেশিনের শব্দ আসে। রাস্তায় বড় বড় ট্রাক আর কিছু মালের গাড়ি চলাফেরা করছে। অবশ্য এতো তাড়াতাড়ি লোকজন কমে যাওয়ার কথা নয়। বর্ষার দিন তো? বৃষ্টির প্রভাবে পরিবেশ কেমন যেনো মরা হয়ে গেছে। তাই বেশিরভাগ মানুষ চলে গেছে বাসায়। শুধু একটু পরপর কয়েকজন লোক দেখা যায়। তারা অন্ধকার প্রেমি। রাতের শহরটা তাদের বন্ধু।
এসব দেখতে দেখতে জুয়েল তার বাসার কাছাকাছি চলে আসে।মেইন রোড থেকে সোজা গলিতে প্রবেশ করে। আর ৪ টা গলি পার হলেই জুয়েলের বাসা চলে আসবে। প্রচন্ড ক্লান্ত সে। গলি পার করে আবার ৩ তলায় উঠতে হবে। সেটা নিয়েই চিন্তিত জুয়েল। সত্যিই,ক্লান্ত দেহ নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠা খুবই কষ্টকর।
জুয়েল প্রথম গলির সামনে প্রবেশ করে, একটুদূর যেতেই খেয়াল করে একটা বৃদ্ধলোক রাস্তার মাঝে বসে আছে। জুয়েল হটাৎ দাঁড়িয়ে যায় রাস্তায়।লোকটি ২০-৩০ হাত দূরে বসে আছে। তাও জুয়েলের দিকে নয়,উল্টোদিকে তাকিয়ে আছে। জুয়েল লোকটির পিঠ দেখে চিহ্নিত করতে পারছেনা। এই গলিতে তো এতো রাতে কোনো ফকিরকেও জায়গা দেওয়া হয়না। দারোয়ান যে কোথায় গেলো কে জানে। তাও লোকটি রাস্তার মাঝে বসে আছে। জুয়েল লোকটির পিছনে,তাই লোকটি কি করছে সেটা দেখতে পারছেনা। জুয়েল একবার ভাবে ছিনতাইকারী কিনা।আবার ভাবে ফকির হবে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে রাত ১১:৫৪ বাজে। অনেক রাত হয়ে গেছে। বাসায় ফিরতে হবে। জুয়েল মনে সাহস নিয়েই এগিয়ে যায়। জুয়েল লোকটির কাছাকাছি ঘেষে যখন সামনে যায়,তখন দেখে মাথা নিচু করে লোকটি তার হাতের নখ কামড়াচ্ছে। জুয়েল বুঝে নিয়েছে এইটা কোনো পাগল হবে হয়তো।
এরপর লোকটিকে এড়িয়ে জুয়েল ২য় গলিতে মোড় নেয়। দ্বিতীয় গলিতে ঢুকার সাথে সাথেই জুয়েলের চোখ কপালে উঠে যাওয়ার অবস্থা। একেবারে ভয়ে ছানাবড়া হয়ে যায় জুয়েল। সে দেখলো ২য় গলিতেও রাস্তার মাঝে, সেই বৃদ্ধলোক বসে বসে কি যেনো করছে।জুয়েল এইবার ভয় পায় কিছুটা। সাহস করে জুয়েল পিছনের গলিতে উকি মেরে দেখে,সেই বৃদ্ধা লোকটি এখনো ১ম গলিতে বসে আছে। একই ব্যাক্তি দুই গলিতে কিভাবে থাকতে পারে। জুয়েল মনে করতে লাগলো,আরো ভালোভাবে মনে করার চেষ্টা করছে। হাজারো চেষ্টার পর জুয়েল শিওর হয়েছে,আজকে তো সে গাজা সেবন করেনি। তাও এসব কি হচ্ছে।
জুয়েল সাহস নিয়ে দ্বিতীয় ব্যাক্তিটাকে এড়িয়ে গিয়ে পিছনে তাকায়। তাকিয়ে জুয়েল যা দেখেছে,এইটা হয়তো তার লাইফে ফার্স্ট অভিজ্ঞতা। এইবারের লোকটি হাতের নখ নয়, সে তার পা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। জুয়েল বৃদ্ধার দিকে তাকাতেই বৃদ্ধাও জুয়েলের দিকে তাকায়। জুয়েল দেখে লোকটির সারা মুখে রক্ত মিশ্রিত। চোখের নিছে কালো দাগ আর চোখদুটো পুরো সাদা। এমন ভয়ংকর চেহারা দেখে জুয়েল ভয়ে দৌড় দেয় বাসার দিকে। ২য় গলি পার হয়ে তৃতীয় গলিতে পা রাখতেই জুয়েল দেখতে পায়, একে একে ১০ জন বৃদ্ধা গলির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের সবাদ হাতে হসপিটালে ব্যবহার করা অক্সিজেনের বোতল। প্রতিটি বোতল থেকে বের হচ্ছে ছোট ছোট কয়েকটি বাচ্চার হাত। হাত গুলোও খুব ধারালো। যেনো ছুরির মতো নখ। একই রকম চেহারার এতোগুলো মানুষ। সবার হাতে অক্সিজেনের সিলিন্ডার। আর সেই সিলিন্ডারের ভিতর থেকে বাচ্চাদের ভয়ংকর হাত ভেদ করে বের হচ্ছে। একসাথে এতোগুলো ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পড়ে জুয়েল তাল হারিয়ে পেলে। মাথায় একটা চক্কর মেরে উঠে জুয়েলের। চারদিক অন্ধকার হতে লাগলো। লোকগুলোকে ঝাপসা দেখতে পাচ্ছে জুয়েল। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে যায়,আর জ্ঞান হারায় জুয়েল।
পরেরদিন সকালে জুয়েল চোখ মেলে দেখে নিজের রুমে শুয়ে আছে। পাশে রনি, রবি,রাকিব আর রিফাত দাঁড়িয়ে আছে। জুয়েলের মা বাবা পাশের রুম থেকে দৌড়ে এসেছে মাত্র। জুয়েল নিজে নিজে ভয়ার্ত গলায় বলতে লাগলো,
– বৃদ্ধ, হ্যা বৃদ্ধলোক। বাচ্চার হাত। ভয়ংকর চেহারা। ওরা অনেকজন একই চেহারার। আমাকে মেরে ফেলবে ওরা। ওরা আমাকে নিয়ে যেতে এসেছে। বাচাও আমাকে।
বলতে বলতে কান্না করতে লাগলো জুয়েল।এরপর রনি বলল,
– তুই কি পাগল হয়েছিস? কাল বিকেলেই তো সুস্থ ছিলি। রাতের মধ্যেই কি হয়ে গেলো এমন হা?
– তুই জানিসনা। ওরা খুবই ভয়ংকর। কোনো আত্মা হবে। আমার খুব ভয় করছে বন্ধু।
– আরে তুইও দেখি রবির মতো হয়ে গেছিস। আমাদের খুলে তো বল কি দেখেছিস।
এরপর জুয়েল এক এক করে কাল রাতের সব ঘটনা খুলে বলে। জুয়েলের কথাও তেমন স্পষ্ট না। ভয়ের কারণে বেচারা উচ্চারণটাও ভুল করে যাচ্ছে । তবে পুরো ঘটনা ফেলে দেওয়ার মতো না। রবি নাহয় ভিতু,কিন্তু জুয়েল খুব সাহসী। জুয়েল এই ব্যাপারে মিথ্যা বলতে পারেনা। সবার মনের মধ্যে ভয়টা একটু জায়গা করে নিয়েছে আজ। রনি ভয় পেয়েছে এইটা বুঝতে দিচ্ছেনা। পাল্টা প্রশ্ন করলো,
– আচ্ছা,আমি একটা জিনিষ বুঝতে পারছিনা।( কথাটা অর্ধেক বলেই থেমে যায় রনি। পাশে জুয়েলের মা বাবার দিকে তাকিয়ে বলল)
– আংকেল আন্টি,আপনারা একটু পাশের রুমে যাবেন? আমরা একটু পার্সোনাল কথা বলি?( রনির কথায় হ্যা সম্মতি দিলেন উনারা । উনারা রুম থেকে যাওয়ার পর রনি আবার বলতে লাগলো)
– আমরা তো একটা মেয়েকে ধর্ষণ করেছি। আত্মা আসলে মেয়ের আত্মা আসা উচিৎ। কিন্তু এখানে বৃদ্ধ, বাচ্চা,আর রবির কথামত একটা ছেলে আসবে কিভাবে। এরা আবার কারা। আমরা তো কোনো বৃদ্ধ না বাচ্চাদের হত্যা করিনি।আর ছেলেটাও বা কে।
রনির প্রশ্নে রিফাত বলল,
– হয়তো তানিয়ার নিখোঁজে তার বাবা আত্মহত্যা করেছে। বৃদ্ধা লোকটা হয়তো তিনিই।কিন্তু ছেলেটা কে?আর বাচ্চা গুলাও কে?
– না রিফাত। আমি খবর নিয়েছি। তানিয়ার বাবা পরশু রাতে থানায় মামলা করে চুপ হয়ে গেছে। উনি মরেনি। পুলিশ এসেছিলো কলেজে। তোরা কাল যাবার পর আমি কলেজে তিন্নির সাথে দেখা করেছি। ফেরতে লেট হয়েছিলো। আর কলেজে পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমাকেও প্রশ্ন করেছে। আমিও বলেছি তাকে বিকেলের পর আর দেখিনি। পরে তারা চলে যায়।
– তাহলে এরা কারা? বাচ্চা,বৃদ্ধ আর ছেলেটি?
– তা তো জানিনা। দাড়া, আমার পরিচিত একটা ছেলে আছে। সে তান্ত্রিকপন্থা শিখেছে। তার সাথে যোগাযোগ করি।
– আচ্ছা? ঘটনাটা কেমন হয়ে গেলোনা? কেমন যেনো হিন্দি মুভির মতো। ভূত প্রেত বলতে কি সত্যিই কিছু আছে?
– আমারও তো মনে হয়না।কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী মেনে নিতে হচ্ছে।আচ্ছা সবাই চল। সেই তান্ত্রিকের বাসায় যাই। উনি হয়তো কিছু করতে পারবেন।
– চল।
সবাই রওনা দিলো তান্ত্রিকের বাসায়।জুয়েল নিজেদের বাসা থেকে প্রাইভেট কার নিয়ে বের হয়। যেতে হবে সাভারে।লোকটি নাকি সাভারে গ্রাম সাইডের মতো একটা ঝোপের আড়ালে থাকে। নিশ্চুপ একটা জায়গা। ছোট একটা কুটিরে থাকেন। ঢাকা থেকে সাভারে বেশি সময় লাগবেনা। ২ ঘন্টার মধ্যে যেতে পারবে। ওরা পুরো স্পিডে কার চালাচ্ছে। শ্যামলী রোড পার হওয়ার পর যে রাস্তাটা, এইটা সম্পুর্ন গ্রামঅঞ্চল রাস্তার মতো। ফাকা রোড পেয়ে রনি স্পিকারে গান চালিয়ে দেয়। হৈ উল্লাস করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিলো তারা।
হটাৎ তাদের গাড়ি অস্বাভাবিক ভাবে নড়ে উঠে। মনে হয়েছে কাওকে এক্সিডেন্ট করে ফেলেছে। সাথে সাথে ওরা গাড়ি কড়া ব্রেক কষলো। রিফাত বলল,
– জুয়েল,গাড়ি থামাইস না। পুলিশের ঝামেলায় পড়লে সমস্যা হবে। চল তাড়াতাড়ি।
– না, হয়তো এক্সিডেন্ট হয়নি কেও। চল দেখে আসি কি হয়েছে। যদি গাড়ির কোনো নাট লুজ হয়, তাহলে তো সবাই মরবো।
এইটা বলে জুয়েল গাড়ি থেকে বের হয়। জুয়েলের সাথে বাকি ৪ জনও বের হয়েছে। ওরা গাড়ি থেকে নেমে দেখে, একটা কুকুরকে পিষে ফেলেছে। এইটা দেখেই তারা আবার গাড়িতে উঠে যায়।কুকুর মরেছে,মানুষ তো নয়।
অবশেষে তারা পৌঁছালো সাভারে। রোড থেকে চিপা রাস্তায় গাড়ি নামিয়ে দেয়। তান্ত্রিকের কুটির অব্দি চলে যায় ১৫ মিনিটে।এরপর উনার বাসার সামনে গিয়ে গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে নেমে ওরা পাঁচজন সোজা তান্ত্রিকের বাসায় প্রবেশ করে।
এরপর যা দেখেছে,তা কখনোই বিশ্বাস করার মতো নয়। ওরা বাসায় প্রবেশ করে দেখে,তান্ত্রিককে কেও আগে থেকেই মেরে ফেলেছে। তান্ত্রিকের মাথার মগজ দেখা যাচ্ছে। হাত পা রক্তাক্ত হয়ে আছে। আর সব চেয়ে অবাক করার মতো যেটা,তা হচ্ছে তান্ত্রিকের দেহ মাটি থেকে ১ ফুট উপরে শূন্যে ভাসছে।
রাত ১০ টা ২৩ মিনিট। রবির প্রচন্ড জ্বর। এমন দৃশ্য দেখার পর রবি নিজেকে মেনে নিতে পারেনি। সবাই পালিয়ে এসেছিলো। যে যার বাসায় ভয়ে লুকিয়ে আছে। ওরা এইটাই জানেনা,এই আত্মাগুলো কারা। কেন তাদের এইভাবে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। রবির মা রবির গায়ে কাথা মুড়ে দিয়ে চলে যায়। রবির চোখের সামনে শুধু তান্ত্রিকের লাশটা ভাসছে। কল্পনায় লাশটা দেখতে পাচ্ছে বার বার। তখনি রবি অনুভব করলো,ওর পা কেও কেটে নিয়ে গেছে।
চলবে……….
গল্প- #ভয়ংকর_রহস্য ( পর্ব-০১)
লেখক- Riaz Raj