নিজস্ব প্রতিবেদক: হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি-জামাত ও জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। তাই এবার উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। তবে দলীয় কোন্দল নয়, প্রতিদ্বন্দ্বীমুলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রার্থী এমন দাবি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের।
এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে প্রায় ডজনখানেক চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম শুনা গেলেও শেষমেশে ৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন ফরম জমা দিলেও প্রত্যাহারের দিন দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী অদৃশ্য কারণে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।
চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ৩ জন প্রার্থী প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ইউনুস গণি চৌধুরী, বর্তমান চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি এসএম রাশেদুল আলম ও হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান।
তবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় সংসদ উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপির আশীর্বাদপূষ্ট চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ইউনুস গণি চৌধুরী। তিনি দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরেও জোটগত কারণে এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। তখন থেকেই তিনি জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও হাটহাজারী আসন থেকে বার বার নির্বাচিত সাংসদ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি'র সাথে থেকে আবার কখনো কখনো তিনি নিজের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে চষে বেড়ান হাটহাজারীর আপামর জনতার সাথে। সেই সুবাদে এবং মহাজোট প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি'র সমর্থন থাকায় বেশ উৎফুল্ল আর উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এমন ধারণা ইউনুস গণি চৌধুরীর সমর্থকদের।
অন্য দিকে, ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত তাক লাগিয়ে দেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে বর্তমানে সভাপতি মনোনীত হওয়ায় এসএম রাশেদুল আলম। তিনিও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধরাশয়ীভাবে হেরে যাওয়া এমএ সালামের আশীর্বাদপূষ্ট হতে পারেন এমন ধারণা রাশেদ সমর্থকদের।
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কেটলি প্রতীকের শাহজাহান চৌধুরীর সমর্থন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমানও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে উঠান বৈঠক করেছেন। এবার দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আলহাজ্ব ইউনুস গণি চৌধুরী ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলমকে হারিয়ে হাটহাজারীবাসীকে চমক উপহার দেবেন বলে ধারণা তাদের সমর্থকদের।
সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান সমর্থকরা জানান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ইউনুস গণি চৌধুরীর কিছু নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায় তারা প্রকাশ্যে কাজ না করলেও ভোটবাক্সে ভোট দেবে না। যা নোমান ভাইয়ের জন্য সুযোগের হাতচানি। অন্য দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলমের দ্বিমুখী নীতিমালা অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়ায় এবং নিজের বলয় আর সমর্থক সৃষ্টি করতে গিয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালাম বিরোধী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তার কারণে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম তাকে সমর্থন করবে না। সে সুবাদে নোমান ভাইয়ের আরেকটি প্লাস পয়েন্ট বলে তাদের দাবি।
তাহলেই কি ইউনুস গণি চৌধুরী ও বর্তমান হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলম এবং হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমানে সঙ্গে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে এমন প্রত্যাশা তিন গ্রুপের নেতাকর্মীদের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবার হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন সাংসদের আশীর্বাদপূষ্ট হওয়ায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ইউনুস গণি চৌধুরী জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন তারা। তবে গতবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাক লাগিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়া চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি এসএম রাশেদুল আলমের ঘাম ঝরিও লাভবান হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে মনে করেন তারা।
এদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ সালামের দিকে তাকিয়ে আছেন গতবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাক লাগিয়ে চেয়ারম্যান হওয়া চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি এসএম রাশেদুল আলম। যদিও তিনি অভিভাবক হিসেবে আগলে রেখেছেন এমএ সালাম কে। তবে এখনো পর্যন্ত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম কে আসন্ন হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আবারও প্রার্থী হয়েছেন এসএম রাশেদুল আলম। কিন্তু তার প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যায়নি এমএ সালাম কে।
একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, এ উপজেলায় ৬/৭টি গ্রুপে বিভক্ত ক্ষমতাসিন আওয়ামী লীগ। তবে গ্রুপে বিভক্ত হলেও প্রকাশ্যে সালাম, ইউনুস গণি ও মঞ্জুরুল আলম এই ৩ গ্রুপ। তবে প্রকাশ্য না হলেও ভিতরে ভিতরে বিভক্ত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন শাহ এর রয়েছে একটি বলয়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সদস্য রাশেদুল ইসলাম রাসেল এরও রয়েছে একটি বলয়, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি এসএম রাশেদুল আলম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা কমিটির সদস্য মাহমুদ সালাউদ্দিন চৌধুরী সেলুও গ্রুপে বিভক্ত বলে জানা যায়। আবার এই বিভক্তির কথাও জানেন সাবেক সাংসদ প্রার্থী ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ সালাম। তিনিও আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কারোই পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করবেন না বলে গোপন সূত্রে জানা যায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান হাবিবুর রহমান উদালিয়া বলেন, উত্তর হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ, ধলই, মির্জাপুর, গুমানমদ্দন, নাঙ্গলমোরা এই ৫ ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের দূর্গ খ্যাত ফরহাদাবাদ ও ধলই ইউনিয়ন হলো চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গণি চৌধুরীর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তিনি এবার বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হবেন। তিনি নির্বাচন করা ছাড়াও হাটহাজারীবাসীর পাশে ছিলেন এবং আছেন।
সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি বিজয়ী হবো।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলম বলেন, গত ৫ বছর আমি হাটহাজারীবাসীর জন্য কাজ করেছি। এবারও আমি মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছি।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ইউনুস গণি চৌধুরী বলেন, হাটহাজারীর জনগণ চাচ্ছে এবং হাটহাজারীর মানুষের জন্য নির্বাচন ছাড়াও মাঠে ময়দানে কাজ করে যাচ্ছি এবং যাবো। তাই এবার হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছি।