নিজস্ব প্রতিবেদক: হাটহাজারীতে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর শিশু হালিমা হত্যার স্বীকারোক্তমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন ধর্ষক নাছির ও সাফায়েত বলে জানান মডেল থানার ওসি মনিরুজ্জামান।
সোমবার (২২ জানুয়ারী) রাত ১০টার দিকে মডেল থানায় ওসি মনিরুজ্জামান সমকাল কে জানান, আজ বিকাল ৪টার দিকে দুইজন কে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তার আগের দিন বাঁশখালীর ফোরকানকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে মুল ধর্ষক ও খুনি হিসেবে স্বীকারোক্তমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন রাঙ্গুনিয়ার নাছির ও শিকারপুরের সাফায়েত সাজিদ বললেন ওসি।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ১। মোঃ নাছির উদ্দিন (৩৫), পিতা- মৃত মোঃ মাহমুদুল হক, মাতা- আম্বিয়া বেগম, সাং- জামছড়ি, মাহমুদুল বাড়ি, ০৯নং ওয়ার্ড, খোদালা ইউপি, থানা- রাঙ্গুনিয়া, জেলা- চট্টগ্রাম।
২। মোঃ সাফায়েত হোসেন সাজিদ (১৬), পিতা- মোঃ সামসুদ্দিন, মাতা- পারুল বেগম, বর্তমান সাং- পূর্ব শিকারপুর, বাবলু এর ভাড়াঘর, ০২নং ওয়ার্ড, ১৪নং শিকারপুর ইউপি, থানা- হাটহাজারী, জেলা- চট্টগ্রাম।
ওসি মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ধর্ষক ও খুনি নাছির ও সাফায়েত স্বীকারোক্তমুলক জবানবন্দিতে শিকার করেন যে, গত ১১ জানুয়ারী সন্ধ্যার দিকে শিশু হালিমা কে কৌশলে ডেকে নেন নাছির ও সাফায়েত। এরপর তাকে ফুসলিয়ে কলাবাগানে নিয়ে ধর্ষণ করার সময় সে চিৎকার দেয়৷ তখন প্রচুর রক্তপাত হলে সেখানে হালিমা অচেতন হয়ে পড়ে। তারপরও দুইজন তার মুখ চেপে ধরে চিৎকার না করার জন্য। এতেই শিশু হালিমার মৃত্যু হয়। এরপর তাঁরা লাশ গুম করার চেষ্টা করে। না পেরে দুইজনে উদ্ধার করা স্থান থেকে কিছুটা দূরে কলাপাতা দিয়ে শিশু হালিমার লাশ ঢেকে রাখেন। সেখানে শিশু হালিমার লাশ ফুলে ও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় তারা উভয়ই লাশটি উদ্ধার করা স্থানে ফেলে তারা উভয়ই চলে যায়। তারপর গত ২০ জানুয়ারী রাত সাড়ে ৭টার দিকে নিখোঁজ শিশু ফাইজা আক্তার হালিমা (৮) লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সন্দেহজনক হিসেবে বাঁশখালীর ফোরকানকে আটক করা হয়। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এরপর বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে ইডেন নুর ইনিস্টিটিউড অব টেকনোলজির এর দারোয়ান নাছির কে আটক করা হয়। সে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেন। এর সাথে জড়িত সাফায়েত সাজিদ এর সম্পৃক্ততা স্বীকার করেন। গত ২১ জানুয়ারী রাত ২টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
এমন হত্যাকান্ডে রুজুকৃত মামলার ঘটনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘটনার সাথে জড়িত দুই আসামি কে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনার মূলহুতা আসামী মোঃ নাছির উদ্দিন (৩৫) বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
প্রসঙ্গত, ভিকটিম ফাইজা আক্তার হালিমা (০৮) গত ১১ জানুয়ারী সন্ধ্যা অনুমান ৭টার সময় ভিকটিম অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে হাটহাজারী মডেল থানাধীন পশ্চিম শিকারপুর, জসিমের ভাড়া বাসার সামনে খেলাধূলা করার সময় নিখোঁজ হয়। পরবর্তীতে ভিকটিম বাসায় না ফেরায় তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সম্ভাব্য সকল স্থানে ভিকটিমকে খোঁজা খুঁজি করতে থাকে। অনেক খোঁজ খুঁজি করেও ভিকটিমের কোন সন্ধ্যান না পাওয়ায় গত ১২ জানুয়ারী হাটহাজারী মডেল থানায় জিডি নং-৮১০, মূলে একটি নিখোঁজ জিডি করেন। খোঁজা খুঁজি করাকালে ২০ জানুয়ারী বিকাল অনুমান ৪টার সময় বাদী লোকজনের মাধ্যমে সংবাদ পান যে, হাটহাজারী মডেল থানাধীন ১৪নং শিকারপুর ইউপিস্থ ২নং ওয়ার্ডে পূর্ব শিকারপুর সাকিনে চন্দ্রবিলস্থ ইডেন নুর ইনিস্টিটিউড অব টেকনোলজির এর পিছনে উত্তর পূর্ব দিকে অনুমান ৬০ গজ দূরে ভিটার ঢালে একটি মেয়ের লাশ পড়ে আছে। এমন সংবাদ পেয়ে বাদী ও তার আত্মীয় স্বজনরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং তার মেয়ের অর্ধগলিত পঁচা গন্ধযুক্ত মৃত দেহ দেখতে পান এবং সনাক্ত করেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা আকবার হোসেন (৩১) বাদী হয়ে মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৩।
ঘটনার মূলহুতা আসামী ১। মোঃ নাছির উদ্দিন (৩৫) বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।