নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে নিজ ভাসুরকে কুপিয়ে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী রহিমা বেগম’কে দীর্ঘ ১৮ বছর পলাতক থাকার পর গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭।
সোমবার (১৯ জুন) বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
র্যাব ৭ এর সিনিয়র সহকারী মিডিয়া পরিচালক মোঃ নুরুল আবছার বলেন, নিহত ভিকটিম আবুল কালাম @ সাহেব মিয়া (৫২) চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই থানাধীন (বর্তমানে জোরারগঞ্জ থানা) মরগং এলাকায় বসবাস করতেন। ভিকটিমের সাথে তার আপন ভাই নুর মোহাম্মদ ও তার স্ত্রী রহিমা বেগমের পূর্ব হতে জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। উক্ত বিরোধের জের ধরে গত ৫ নভেম্বর ২০০৫সালের বিকাল আনুমানিক ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে নুর মোহাম্মদ ও তার স্ত্রী রহিমা বেগম ভিকটিম আবুল কালাম @ সাহেব মিয়াকে সুকৌশলে পাতাকোট এলাকায় ডেকে নিয়ে বটি ও দা দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে ঘটনাস্থলের পার্শ্বে নির্জন স্থান পুকুরে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকদের মাধ্যমে পুকুরে লাশ ভাসার সংবাদ পেয়ে মিরসরাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করলে ভিকটিমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম লাশটি তার স্বামীর বলে সনাক্ত করেন। উক্ত অমানবিক ও পাশবিক চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি সে সময় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই থানায় ২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং- ০৭(১১)২০০৫, জিআর- ২৩৬/২০০৫, দায়রা- ৪৩৬/২০১০, ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০।
মামলাটি তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচারকার্য শুরু হয়। ঘটনার পর থেকেই আসামী রহিমা বেগম (৬০) আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। আসামী রহিমা বেগম দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত পুলিশের তদন্ত এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহন শেষে উক্ত আসামীর অনুপস্থিতিতে ভিকটিম আবুল কালাম @ সাহেব মিয়া (৫২) কে হত্যার দায়ে আসামী রহিমা বেগম (৬০) এবং তার স¦ামী নূর মোহাম্মদকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেন।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে যে, বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী রহিমা বেগম আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনামে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানাধীন লক্ষীপুর এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ১৯ জুন বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী রহিমা বেগম (৬০), স্বামী- নুর মোহাম্মদ, সাং- মরগাং, থানা- জোরারগঞ্জ, জেলা-চট্টগ্রাম’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় সে ভিকটিম আবুল কালাম @ সাহেব মিয়া (৫২) কে নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করার পর আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনাম ধারণ করে দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানাধীন লক্ষীপুর এলাকায় বসবাস শুরু করে এবং সেখানে সে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে আসছে।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।