নিজস্ব প্রতিবেদক:
নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন কোয়াইশ রোডস্থ চেয়ারম্যান বাড়ীর সামনে চেয়ারম্যান মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে দেশব্যাপী বিকাশ প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে ৩৪টি সিম কার্ড ও ৭টি মোবাইলসহ আটক করে পুলিশ।
সোমবার (৯ অক্টোবর) বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের কে আটক করা হয়।
মহানগর গোয়েন্দা উপ-পুলিশ কমিশনার নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেন, নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন কোয়াইশ রোডস্থ চেয়ারম্যান বাড়ীর সামনে চেয়ারম্যান মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে দেশব্যাপী বিকাশ প্রতারক চক্রের ৩ জন সদস্যকে আটক করেন এবং তাদের হেফাজত থেকে ৩৪টি মোবাইল সিম কার্ড ও ০৭টি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে মোঃ কামরুল ইসলাম এর হেফাজত থেকে বাংলালিংক কোম্পানীর ১৮টি সিম কার্ড ও ৩টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল সেট, মোঃ বিল্লাল হোসেন এর হেফাজত থেকে ২টি মোবাইল সেট ও রবি কোম্পানীর ১০টি সিমকার্ড, মোঃ ফিরোজ শেখ এর হেফাজত থেকে ২টি মোবাইল ফোন ও ৬টি এয়ারটেল কোম্পানীর সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়। আটককৃত ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, তারা চট্টগ্রাম শহরের যে সকল এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেশী বসবাস করে সে সকল এলাকায় অবস্থিত বিকাশ দোকানকে টার্গেট করে বিকাশের দোকানের সামনে অবস্থান করে বিভিন্ন ব্যক্তি বা গ্রাহক বিকাশে লেনদেনের সময় তাদের বিকাশ নাম্বারটি ও লেনদেনের হিসাব গোপনে ও কৌশলে সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে সময় ও সুযোগ বুঝে ২নং ও ৩নং বিবাদি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে সংগ্রহকৃত বিকাশ নাম্বারে ফোন করে প্রথমে এভাবে ফাঁদ পেতে প্রতারণা শুরু করে যে, ‘‘আমি বিকাশ এজেন্ট অফিস থেকে বলছি, আপনার বিকাশ একাউন্টে কিছু টাকা ভুলে চলে গিয়েছে। উক্ত টাকার মালিক আমাদের অফিসে আপনার একাউন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। এই মুহুর্তে আপনার একাউন্টটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। যদি একাউন্টটি সচল রাখতে চান তাহলে আমাদের বিকাশ অফিস থেকে একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ম্যানেজার ফোন করে কিছু তথ্য চাইবে। আপনি যদি উক্ত তথ্যগুলি সঠিকভাবে দিতে পারেন তাহলে আপনার নাম্বারটি পুনরায় সচল করে দেয়া হবে”,
এই কথা বলে ২নং ও ৩নং বিবাদি তাদের মোবাইল ফোন কেটে দেয়। পরবর্তীতে ২/১ মিনিট পর ১নং বিবাদি মোঃ কামরুল ইসলাম উক্ত নাম্বারে ফোন করে ঐ ব্যক্তিকে বলে যে,‘‘আমি বিকাশ অফিস হতে ম্যানেজার বলছি। আপনার বিকাশ একাউন্ট নাম্বারটি যদি এই মুহুর্তে সচল করতে চান তাহলে আমি কিছু তথ্য চাইব। আপনি যথাযথভাবে তথ্যগুলো দিতে পারলে এই মুহুর্তেই আপনার বিকাশ একাউন্টটি সচল করে দেয়া হবে”, তখন কী করতে হবে জিজ্ঞাসা করলে প্রতারক চক্রের সদস্য বলে আপনার আমাকে পিনকোড দিতে হবে না কিন্তু আপনি সর্বশেষ যে পরিমাণ টাকা বিকাশ করেছেন তার সাথে বিকাশের হেল্পলাইন নাম্বার ও আপনার পিনকোড যোগ-বিয়োগ বা গুণ-ভাগ করেন।
এভাবে কৌশলে প্রতারক চক্র পিনকোডটি সমীকরণের মত হিসাব করে বের করে ফেলে।কেননা পিন কোড ছাড়া সবই প্রতারক চক্রের জানা। এভাবে বিশ্বাস অর্জন করে সে আরো কিছু অপশনে গিয়ে যে OTP আসে তা দিতে বলে। কোন ব্যক্তি প্রতারিত হিয়ে সেই OTP দিয়ে দিলে সেই OTP ও পিনকোড ব্যবহার করে প্রতারক চক্র প্রতারিত ব্যক্তির একাউন্ট হ্যাক করে ফেলে।
জিজ্ঞাসাবাদে ১নং বিবাদি আরো জানান যে, গত ০৮/১০/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ১নং বিবাদি তার ব্যবহৃত মোবাইল নং থেকে জনৈক ব্যক্তির বিকাশ নাম্বার এ ফোন করে ১৭,৫০০/- টাকা হাতিয়ে নেন। এভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজনকে বিকাশে প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। ধৃত ব্যক্তিদের তাদের ব্যবহৃত সিম কার্ডগুলোর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায় যে, বিগত ৭/৮ মাস পূর্বে ঢাকার গুলিস্তান ও লক্ষ্মীবাজার এলাকার মোবাইল মেলা থেকে বাংলালিংক এর একজন এসআর এর নিকট থেকে অন্য ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত ১৮টি সিমকার্ড ও অন্যান্য মোবাইল কোম্পানীর এসআর এর নিকট থেকে অবশিষ্ট সিমকার্ডগুলি প্রতারণার মাধ্যমে ক্রয় করেছে।
ধৃত ব্যক্তিরা আরো জানায় যে, তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মোবাইল ডিলারদের নিকট থেকে এভাবেই অন্য ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত একাধিক সিমকার্ড সংগ্রহ করে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে আসছিল। যখন কোন ব্যক্তি মোবাইল ডিলারের কাছে মোবাইলের সিম কার্ড সংগ্রহ করতে যান, তখন মোবাইল কোম্পানীর ডিলাররা এই মর্মে ঐ ব্যক্তিকে বলেন যে, আপনার ফিঙ্গার প্রিন্ট একবারে যথাযথভাবে নেয়া যাচ্ছে না সার্ভারের সমস্যা বা আপনার হাতের আঙ্গুলে ময়লা বা ঘাম ইত্যাদি থাকার কারণে। আপনাকে আবারও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হবে। এভাবে এক ব্যক্তির নিকট হতে একাধিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে এক ব্যক্তির নামে একাধিক সিমকার্ড রেজিস্ট্রেশন করে উক্ত গ্রাহককে ০১টি রেজিস্ট্রেশনকৃত সিমকার্ড দিয়ে বাকি সিমকার্ডগুলো মোবাইল ডিলাররা জালিয়াতির মাধ্যমে এই সকল প্রতারক চক্রের নিকট বিক্রি করে প্রতারণার কাজে সহায়তা করে আসছিল।