নিজস্ব প্রতিবেদক:
কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় এর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং এটার দায়িত্বে রয়েছেন কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়েরই প্রাক্তন কৃতি ছাত্র,স্থপতি সনজীব বড়ুয়া,PhD.
[caption id="attachment_1365" align="alignnone" width="300"] বিজ্ঞাপন[/caption]
সামগ্রিক অবকাঠামোগত মাস্টার প্ল্যান এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে, সরকারি ভাবে বরাদ্দ প্রাপ্ত ভবন সমূহের চূড়ান্ত স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান ও মাপের মাঠের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, স্কুলের মাঠটি, আন্তর্জাতিক নিয়ম কানুন অনুযায়ী উত্তর - দক্ষিনে লম্বা লম্বি হবে। মাঠের দৈর্ঘ্য X প্রস্থ, এবং ফুটবল মাঠের আয়তন, বর্তমান মাঠের থেকে অনেক বড় হবে এবং জাতীয় প্রতিযোগিতা সমূহ অনুষ্ঠানের জন্য মাঠের যে পরিমাপের দরকার হয়, সেটা পরিপূর্ণ করা হবে। জাতীয় প্রতিযোগিতা সমূহ অনুষ্ঠানের জন্য, কেবল মাত্র স্বীকৃত পরিমাপ থাকলেই হয় না, আরো অনেক অবকাঠামোগত শর্তাবলি পূরণ করতে হয়। আমাদের অবকাঠামোগত মহাপরিকল্পনায়, সেসকল শর্ত পূরণের সকল ব্যবস্থা সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
[caption id="attachment_881" align="alignnone" width="300"] বিজ্ঞাপন[/caption]
সারা পৃথিবীতেই, যখন বিকাল হয়, তখন পশ্চিম দিকের সূর্যের আলো, তাপ,সরাসরি পূর্ব দিকের গোল কিপারের চোখে পড়ে।
তাই সমস্ত পৃথিবীতেই ফুটবল খেলার মাঠ উত্তর দক্ষিণে লম্বা লম্বি করা হয়। আমাদের দেশের সমস্ত স্টেডিয়াম গুলোর মাঠ উত্তর - দক্ষিণে লম্বা লম্বি। স্থানীয় ভাবে নাজিরহাট কলেজ, হাটহাজারী স্কুল, মির্জাপুর স্কুল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম, আরো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ সর্বদাই উত্তর - দক্ষিণ লম্বা লম্বি হয়ে থাকে এবং আছে।
[caption id="attachment_883" align="alignnone" width="300"] বিজ্ঞাপন[/caption]
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সুখকর স্মৃতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভবিষ্যতের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার ধারাবাহিক উন্নয়নের কাজটা সর্বদা অগ্রাধিকার দাবী করে। তাদেরকে আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের জন্য তৈরী হওয়ার এবং তৈরী করার সুযোগ সুবিধা করে দিতে হবে।
২০৩০ সালে পৃথিবী কিরূপ হবে, আগামী পঞ্চাশ, একশত বছরে কি রূপ হবে; এ সব বিষয় গুলোও আমরা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করার সময় আমাদের চিন্তা ভাবনায় রেখেছি।
সে সময়গুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য কি ধরণের স্থাপনা প্রয়োজন হবে, তার স্বাস্থ্যগত, পরিবেশগত, একাডেমিকগত, হোস্টেলগত দিকগুলো কি রূপ হবে, অন্যান্য সামাজিক প্রয়োজনগুলো কি রূপ হবে। এসকল বিষয়াদি আমাদের পরিচালনা পরিষদের সভায়, বার বার গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছে।
[caption id="attachment_882" align="alignnone" width="300"] বিজ্ঞাপন[/caption]
এ সকল আলোচনায় সর্বদাই আমাদের স্কুলের মাঠের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। আমাদের সকলেরই দাবী ছিল, আমরা এমন একটি খেলার মাঠ চাই, যেখানে আমাদের স্কুলের ছেলেরা প্রাণ ভরে খেলবে, এবং মাপ, আয়তন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা এমন ভাবে করা হবে যেন আমরা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা সমূহ এই মাঠেই করতে পারি। প্রস্তাবিত মাঠে জাতীয় পর্যায়ের মাঠের সকল সুযোগ সুবিধা অনেক বার এক্সারসাইজ করার পর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনেকেই জানেন না, মূল মাঠের চারিদিকে অতিরিক্ত কমপক্ষে দশ ফুট জায়গা রাখতে হয়, যাতে খেলোয়াড়েরা খেলা চলাকালীন সময়ে দৌড়ের মধ্যে মাঠের বাইরে চলে যেতে হলেও, থামবার জন্য একটা স্পেস্ পান ; সেটাও প্রস্তাবিত মাঠে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
[caption id="attachment_1395" align="alignnone" width="218"] বিজ্ঞাপন[/caption]
Architectural Master Plan, উন্নত মানের পেশাদার Architect/s দের কাজ। কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় এই কাজে যাঁকে নিয়োজিত করেছে তিনি এই বিদ্যালয়েরই এক জন প্রাক্তন ছাত্র। দীর্ঘ দশ বৎসর এই স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। নিজেও একজন নিয়মিত ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন।
তিনি BUET থেকে কৃতিত্বের সাথে পাশ করা একজন পেশাদার আর্কিটেক্ট। BUET থেকে পাশ করার পর, তিনি জাপানের বিখ্যাত Tokyo University থেকে Architecture এর উপর PhD ডিগ্রী অর্জন করেছেন এবং জাপানে আট বছর পেশাদার আর্কিটেক্ট হিসাবে কাজ করেছেন। তাঁর পেশাদারী যোগ্যতা প্রশ্নাতীত। তিনি ইতিমধ্যে সমগ্র পরিচালনা পরিষদের সামনে সাত সাত বার মহাপরিকল্পনা'র বিস্তারিত Digital Presentation/s প্রদান করেছেন। বহু প্রশ্ন, বহু তর্কাতর্কি,বহ আলোচনার পর " প্রাথমিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এই মাস্টার প্ল্যান সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে, মাস্টার প্ল্যান টি ভালোভাবে বুঝে নেওয়ার জন্য সকলের কাছে অনুরোধ রইলো।
কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় এর বর্তমান শ্লোগান,
" শতভাগ পাস, সব বিষয়ে সেরা "
সব বিষয়ে সেরা করতে হলে, ইনডোর, আউটডোর সকল ধরণের খেলাধূলায় আমাদের ভাল করতে হবে, এসকল খেলার সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা থাকতে হবে। আমরা ফুটবল, ক্রিকেট ছাড়াও ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, বাস্কেটবল চালু করতে যাচ্ছি। এ সব খেলার প্রতিযোগিতাও চালু হবে, এ ব্যাপারে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। ইনডোর গেমসে, দাবা, ক্যারমবোর্ড, টেবিল টেনিস প্রভৃতির প্রতিযোগিতা চালু হবে। আমরা আমাদের মাস্টার প্ল্যান এ একটা বিশ্বমানের সুইমিংপুল অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছি। এর জন্য অতিরিক্ত কিছু জমিও কিনতে হবে।
[caption id="attachment_310" align="alignnone" width="212"] বিজ্ঞাপন[/caption]
সকলকে মাঠের প্রস্তাবিত এলাইনমেন্ট ভালভাবে দেখার অনুরোধ রাখছি। বর্তমান মাঠের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ আয়তন অপেক্ষা প্রস্তাবিত মাঠের আয়তন অনেক বেশী। প্রস্তাবিত মাঠে জাতীয় ভাবে আয়োজিত স্কুল পর্যায়ের সকল খেলাই হতে পারবে, সেই মাপেই মাঠটি তৈরী করা হচ্ছে।এটা হবে আমাদের গর্বের বিষয়।
কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় কে দেশের সেরা বিদ্যালয়ে উন্নীত করার কাজে পরিচালনা পরিষদের সকল সদস্যই নিবেদিত।
আপনাদের সকলের সহযোগিতা সর্বান্তকরণে কাম্য।
Sweeping remark is easy, professional task is hard.
খেলার মাঠ বিষয়ে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় প্রাসঙ্গিকঃ
খেলার মাঠে-র অবস্থান বা "দিক নির্ণয়" (orientation), সূর্য-এর পথরেখা (SUN PATH DIAGRAM) কে অনুসরণ করে "উত্তর-দক্ষিণ" লম্বালম্বি করা হয় ; তখন মাঠটি আলো বাতাসের জন্যে উলম্ব (vertically) এবং আনুভূমিক ভাবে (horizontally) উন্মুক্ত (widely open) থাকে, এই কাজে Facilities (like sports field) Design-এ এই উপমহাদেশের "নির্মাণ বিধিমালা" বা "Design code criteria" অনুসরণ করা হয়েছে।
খেলার সময় (afternoon time) সূর্য্যের চোখ ধাধানো আলো যেন পূর্ব পাশের খেলোয়াড়দের এবং গোল কিপারের দৃষ্টির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে এবং উভয় পক্ষের খেলোয়াড়দের জন্য সমভাবে আলো-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করা, এসকল বিষয় অবকাঠামো পরিকল্পনা করার সময় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
আমরা যদি কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্কুল পর্যায়ের কোন জাতীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চাই, অথবা আয়োজনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করি ; তখন তারা সর্বপ্রথম আমাদের মাঠ আদৌ এ ধরণের প্রতিযোগিতার জন্য উপযোগী কিনা, সেটার assessment (এসেসমেন্ট) করার জন্য, এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ দল পাঠাবে। যদি আমরা উল্লেখিত শর্তাবলি পূরণ করতে সক্ষম না হই, আমাদের এই মাঠে কখনোই জাতীয় পর্যায়ের খেলা অনুষ্ঠিত হবে না।
সকলেরই জানা দরকার
আমাদের সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঠ, আমাদের কাছাকাছি নাজিরহাট কলেজ, ফটিকছড়ি কলেজ, হাটহাজারী স্কুল আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ " উত্তর - দক্ষিণ " এ লম্বা । এমনকি সমগ্র বাংলাদেশের অধিকাংশ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের মাঠ, সরকারি আইনানুগ বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে উত্তর - দক্ষিণে লম্বা।
[caption id="attachment_881" align="alignnone" width="300"] বিজ্ঞাপন[/caption]
Almost COVERED ROOF বিশিষ্ট কিছু মাঠ উন্নত দেশ সমূহে দেখা যায় । বিশেষ করে ইউরোপিয়ান দেশ সমূহে আংশিক বা সম্পূর্ণ আচ্ছাদিত খেলার মাঠ দেখা যায়। সম্পূর্ণ বা আংশিক আচ্ছাদিত মাঠ গুলোতে ; যেখানে সেমি-ওপেন ছাদের ছায়ার কারণে সূর্যের-আলো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না। সে কারণে সে সকল মাঠের orientation বা দিক নির্ণয় আর্কিটেক্ট বা ডিজাইনার গণ স্বাধীন ভাবে করতে পারেন। ইউরোপীয় আচ্ছাদন বিশিষ্ট স্টেডিয়াম প্রচুর বিনিয়োগ সাপেক্ষ ব্যাপার, সে কারনে আপাততঃ আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক নয়।
আমরা আশাকরি যাঁরা কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় এর শুভাকাঙ্ক্ষী বা প্রাক্তন শিক্ষার্থী, তাঁরা উপরে উল্লেখিত সকল বিষয়াবলী ইতিবাচক মনোযোগ সহকারে বিবেচনায় নিবেন এবং মূল্যবান পরামর্শ ও সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখবেন।
লিখেছেন, জিয়াউল কুদ্দুস ও শাহনেওয়াজ চৌধুরী: