হাটহাজারী নিউজ ডেস্ক:
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ, ১৯৭১। কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি…
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।।
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের…!
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য, অসাধারন দিন।
বাঙ্গালী জাতি দীর্ঘ দুইশতাধিক বছরের পরাধীনতা নাগপাশ ছিন্ন করে স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসাবে আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে সুদীর্ঘকালের আপোষহীন আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৭১সালের ৭ই মার্চ বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অর্থাৎ তৎকালীন রেইস কোর্স ময়দানে দাড়িয়ে জাতীর অবিসংবিদিত নেতা ও সর্বকালের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ৭ই মার্চে এক দিকনির্দেশনামূলক ভাষনের মাধ্যমে সমগ্র বাঙ্গালী জাতিকে একসূত্রে গেঁথে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন।
ঐদিন লাখ, লাখ মুক্তিকামী আপামর জনতার উপস্থিতিতে জাতির এই অবিসংবিদিত দেশপ্রেমে অন্তপ্রান নেতা তাঁর বজ্রকন্ঠে ঘোষনা করেন, “মরতে যখন শিখেছি, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দিব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্।
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষনে বাঙ্গালী জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার চূড়ান্ত দিকনির্দাশনা।
অর্থাৎ একটা দীর্ঘদিনের পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতার স্বাদ দিতে, তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে,একটা স্বাধীন দেশ ও জাতি হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মাতৃভূমীকে।
স্বাধীন করতে যত ধরনের ন্যায় সঙ্গত দিক নির্দেশনার প্রয়েজন তার প্রায় সবই বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত ৭ই মার্চের ভাষনে অন্তর্ভূক্ত ছিল। একারনেই বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনকে পৃথিবীর শ্রেষ্ট তিনটি দিকনির্দেশনামূলক ভাষনগুলোর একটি বলা হয়।
বাঙ্গালীরা জানত পাকিস্তানী হানাদারেরা এমনি এমনি স্বাধীনতা হাতে তুলে দিবে না। তার জন্য আরো অনেক মূল্য দিতে হবে। কিন্তু জনগন স্বাধীনতার দাবীতে এতই ওয়াদাবদ্ধ ও একতাবদ্ধ ছিল যে তাতে তারা ভীত না হয়ে বীর বিক্রমে ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করল।
বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রকন্ঠের আহবানে তখন সমগ্র জাতি ছিল সম্পূর্নরূপে উজ্জিবিত। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙ্গালীরা সর্বোচ্চ দৃঢ়তা নিয়ে এগুতে থাকে কাঙ্খিত স্বাধীনতার লক্ষ্যে।
বৃটীশদের পর ১৯৪৭ সাল থেকে সাম্প্রদায়িক উগ্র মনোভাব ও দ্বিজাতিতত্বের মানসিকাতার উপর ভিত্তি করে যে পাকিস্তানের গঠন ও বর্ধন হয় তার বিরোদ্ধে ২৩ বছরের ক্রমাগত আপোষহীন আন্দোলন, সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতিস্বত্তা, জাতীয়তাবোধ ও জাতিরাস্ট্র গঠনের ভিত্তি তৈরী হয়ে যায়।
তারই চূড়ান্ত ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি ৭ই মার্চের ভাষনে সঠিক নির্দেশনা পেয়ে ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, মজুর, প্রায় সকলেই মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহন করে এবং বঙ্গবন্ধুর আহবানে ও নেতৃত্বে পাক হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরোদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যোদ্ধের মাধ্যমে শত্রুদের পরাজিত করে আমাদের মহান এই মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করে এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্যে দিয়ে আমরা অর্থাৎ বাঙ্গালী জাতি তাদের স্বাধীনতা অর্জন করে।
বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হয় এক স্বাধীন সার্বভৌম দেশ,যার নাম বাংলাদেশ। বাঙ্গালীরা পায় এক স্বাধীন জাতির মর্যাদা ও স্বীকৃতি।
একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কারনে ও নেতৃত্বে এদেশ আজ স্বাধীন। বঙ্গবন্ধুর হাতেই জন্ম এই স্বাধীন দেশ ও জাতির। তাই তাঁর অসামান্য কৃতিত্বের জন্য জাতি বঙ্গবন্ধুকে জাতির_জনক” হিসাবে সাংবিধনিক ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কোন জাতির সমগ্র জীবনে এমন নেতা এক/দুই বারের বেশী আসে না। বাঙ্গালী জাতি উনাকে পেয়ে ধন্য ও সৌভাগ্যবান।
স্বাধীনতার অপর নাম বঙ্গবন্ধু।